Connect with us
ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে? চ্যাম্পিয়নদের তালিকা

বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে
তাবৎ দুনিয়ার ফুটবলের মহাযজ্ঞ শুরু হয় বিশ্বকাপকে ঘিরে। ছবি- সংগৃহীত

ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ’। তাবৎ দুনিয়ার ফুটবলের মহাযজ্ঞ শুরু হয় বিশ্বকাপকে ঘিরে৷ ১৯৩০ সাল থেকে আজও নিরন্তর চলছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় এ বৈশ্বিক আসর৷ অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ বিশ্বকাপের দুটি আসর ভেস্তে যায়৷ তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে?

এখন পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপে ৮টি দেশ শিরোপা ঘরে তুলেছে। সর্বোচ্চ ৫ বারের শিরোপাজয়ী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। একমাত্র সেলেসাওরা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে অংশগ্রহণ করেছে। ব্রাজিল ছাড়াও ইতালি ৪, জার্মানি ৪, আর্জেন্টিনা ৩, উরুগুয়ে ও ফ্রান্স ২ বার করে শিরোপা জিতেছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড ও স্পেন শিরোপা জিতেছে একবার করে।

১৯৩০-২০২২ : বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে?

১৯৩০ বিশ্বকাপ : উরুগুয়ে

চ্যাম্পিয়ন : উরুগুয়েরানার্স আপ : আর্জেন্টিনা

১৯০৪ সালে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দীর্ঘ ২৬ বছর পর ফুটবলের প্রথম কোনো বৈশ্বিক আসর বসে৷ ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসে উরুগুয়েতে৷ ইউরোপে আয়োজিত অলিম্পিকের বিগত দুই আসরে উরুগুয়ের বিজয় দেশটিকে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের যোগ্য দাবিদার বানায়। রাজধানী মন্টিভিডিওতে ১২টি দেশকে নিয়ে বসে বিশ্বকাপের প্রথম আসর।

প্রথম আসরে ইউরোপ থেকে যোগ দেয় মাত্র ৪টি দেশ৷ ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের মুখোমুখি হয় আরেক দক্ষিণ আমেরিকান দেশ আর্জেন্টিনা৷ সে ম্যাচে ৪-২ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। এর আগে ১৯২৮ সালের অলিম্পিকের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল উরুগুয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে, ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে এতোটাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, নিরাপত্তাহীনতার কারণে ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য বেলজিয়ামের রেফারি জন লাংগেনুস জীবনবীমা দাবি করেছিলেন৷

বিশ্বকাপের প্রথম আসরে তৃতীয় হয় যুক্তরাষ্ট্র আর চতুর্থ হয় যুগোস্লাভিয়া। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার স্তাবিল ৮ গোল দিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়, উরগুয়ের সিয়া দেন ৫ গোল৷ বিশ্বকাপের ইতিহাসে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথম গোল করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা ফ্রান্সের লুই লরেন্ত।

FIFA World Cup

১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসে উরুগুয়েতে। ছবি- সংগৃহীত

১৯৩৪ বিশ্বকাপ : ইতালি

চ্যাম্পিয়ন : ইতালিরানার্স আপ : চেকোস্লোভিয়া

প্রথম বিশ্বকাপের ৪ বছর পর ১৯৩৪ সালে ইতিহাসের দ্বিতীয় বিশ্বকাপও জেতে স্বাগতিক দেশ। সেবারের আয়োজক ছিল ইউরোপের দেশ ইতালি। ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট স্টেডিয়ামে ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতে ইতালি। সম্প্রতি ইতালির নাগরিক হওয়া দুই সাবেক আর্জেন্টাইন এতে ভূমিকা রাখেন। ওরসি প্রথম গোলটি করেন গোলকিপারকে কাটিয়ে আর গুইতা সিয়াভিওর দিকে পাস বাড়িয়ে দেন, যা থেকে হওয়া গোলটি ইতালিকে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দেয়।

১৯৩৪ সালে ১৬টি দেশ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল, যার মধ্যে ১২টি ছিল ইউরোপের, ৩টি লাতিন আমেরিকার আর বাকি দেশটি মিসর, বাকি বিশ্বের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে। আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, ইতালি প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে মন্টেভিডিও যায়নি। জার্মানি ও অস্ট্রিয়া যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান লাভ করে। চেক খেলোয়াড় নেজেদলি ৫ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। আর জার্মানির কোনেন ও ইতালির সিয়াভিও ৪টি করে গোল দেন।

১৯৩৮ বিশ্বকাপ : ফ্রান্স

চ্যাম্পিয়ন : ইতালিরানার্স আপ : উরুগুয়ে

আগের আসরের মতো এটাও ছিল ইউরোপীয় আসর৷ নিজেদের মাটিতে শিরোপা জয়ের ৪ বছর পর এবার ফ্রান্সের মাটিতে ১৫টি দেশের অংশগ্রহণে শিরোপা জেতে ইতালি। সেমিফাইনালে আজ্জুরিরা ব্রাজিলকে হারায়। একটা পেনাল্টির সিদ্ধান্ত সন্দেহজনক হলেও বৃথা যায় ব্রাজিলের প্রতিবাদ। ১৯৩৪ সালের মতো এবারও সব রেফারি ছিলেন ইউরোপীয়।

এরপর আসে ইতালি আর হাঙ্গেরির মধ্যকার ফাইনাল। ম্যাচ নিয়ে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। ম্যাচের আগের রাতে ইতালীয় খেলোয়াড়েরা রোম থেকে তিন শব্দের একটি টেলিগ্রাম পান, ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনির স্বাক্ষরসহ তাতে লেখা ছিল, ‘জেতো অথবা মরো।’ তাঁদের শেষতক আর মরতে হয়নি, খেলার ফলাফল ছিল ৪-২। পরের দিন ইতালীয় দৈনিক গাজেত্তো দেল্লো স্পোর্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে লেখে, ‘আর্য জাতির এই মহান বিজয়ী ফ্যাসিবাদের আদর্শকে আবারও সত্য প্রমাণিত করল।’

টুর্নামেন্টে সর্বমোট গোলের সংখ্যা ছিল ৮৪টি এবং ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ব্রাজিলের লেওনিদাস। প্রথম রাউন্ডের একটি ম্যাচে ব্রাজিল ৬-৫ গোলে হারায় পোল্যান্ডকে। সে ম্যাচে লেওনিদাস হ্যাটট্রিক করেন।

১৯৩০-২০২২ — বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে – এক নজরে তালিকা

আসরসালচ্যাম্পিয়নরানার্স আপআয়োজক দেশ
১ম১৯৩০উরুগুয়েআর্জেন্টিনাউরুগুয়ে
২য়১৯৩৪ইতালিচেকোস্লোভিয়াইতালি
৩য়১৯৩৮ইতালিউরুগুয়েফ্রান্স
৪র্থ১৯৫৪পশ্চিম জার্মানিহাঙ্গেরিসুইজারল্যান্ড
৫ম১৯৫৮ব্রাজিলসুইডেনসুইডেন
৬ষ্ঠ১৯৬২ব্রাজিলচেকোস্লাভিয়াচিলি
৭তম১৯৬৬ইংল্যান্ডপশ্চিম জার্মানিইংল্যান্ড
৮ম১৯৭০ব্রাজিলইতালিমেক্সিকো
৯ম১৯৭৪জার্মানিনেদারল্যান্ডসজার্মানি
১০ম১৯৭৮আর্জেন্টিনানেদারল্যান্ডসআর্জেন্টিনা
১১তম১৯৮২ইতালিজার্মানিস্পেন
১২তম১৯৮৬আর্জেন্টিনাজার্মানিমেক্সিকো
১৩তম১৯৯০জার্মানিআর্জেন্টিনাইতালি
১৪তম১৯৯৪ব্রাজিলইতালিমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৫তম১৯৯৮ফ্রান্সব্রাজিলফ্রান্স
১৬তম২০০২ব্রাজিলজার্মানিদক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান
১৭তম২০০৬ইতালিফ্রান্সজার্মানি
১৮তম২০১০স্পেননেদারল্যান্ডসদক্ষিণ আফ্রিকা
১৯তম২০১৪জার্মানিআর্জেন্টিনাব্রাজিল
২০তম২০১৮ফ্রান্সক্রোয়েশিয়ারাশিয়া
২১তম২০২২আর্জেন্টিনাফ্রান্সকাতার

১৯৫৪ বিশ্বকাপ : সুইজারল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন : পশ্চিম জার্মানিরানার্সআপ : হাঙ্গেরি

১৯৫৪ সালে ১৬টি দেশের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ ফুটবলের পঞ্চম আসর বসে সুইজারল্যান্ডে। এতে অংশ নেয় ইউরোপের ১১টি, আমেরিকা মহাদেশের ৩টি এবং সেই সঙ্গে তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া। সাদা জার্সি বাদ দিয়ে ব্রাজিল প্রথম বারের ক্যানারিনহো নামক হলুদ ব্জার্সি পরে খেলতে নামে। কারণ সাদা জার্সি গত বিশ্বকাপে মারাকানায় তাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিল। তবে সেই হলদে জার্সি পরেও প্রথমে ব্রাজিল তেমন সুবিধা করতে পারেনি।

কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-হাঙ্গেরির ম্যাচটি শারীরিক শক্তি প্রয়োগের এক বীভৎস রূপ লাভ করায় ‘বর্ণের যুদ্ধ’ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছে। ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ রেফারিকে ৩টি লাল কার্ড ও ২টি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিতে হয়। খেলার পরও দু’দলের খেলোয়াড়রা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিল তখন ফিফার কাছে ব্রিটিশ রেফারির বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করে যে রেফারি পশ্চিমের খ্রিষ্টীয় সভ্যতার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক কমিউনিজমের হয়ে কাজ করেছেন।

১৯৫৪ জেতার জন্য হাঙ্গেরি ছিল সবচেয়ে ফেবারিট। পুসকাস, ককসিচ, হিদেকুটিদের নিয়ে গড়া দলটি বছরের পর বছর ছিল অপরাজিত৷ প্রায় ৩১ ম্যাচ তাঁরা অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ শুরু করেছি৷ এছাড়া বিশ্বকাপের আগে আগে তারা ইংল্যান্ডকে হারায় ৭-১ গোলে। তবে মসৃণ ছিল না হাঙ্গেরির অগ্রযাত্রা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর, সেমিফাইনালে উরুগুয়ের সঙ্গে তারা সর্বস্ব উজাড় করে খেলে।

দুই দলই মরণপণ লড়াই করে, কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান মন্ত্র জপে একে অপরকে ধরাশায়ী করার উন্মাদ লড়াইয়ে মেতে উঠে। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ককসিচের ২ গোলে হাঙ্গেরির ফাইনাল খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। ফাইনালে হাঙ্গেরি মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানি, তাঁর ছিল হাঙ্গেরির কাছে তুলনামূলক খর্ব শক্তির দল৷ কারণ হাঙ্গেরি টুর্নামেন্টের শুরুতে অধিনায়ক পুসকাসকে ছাড়াই ৮-৩ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে পর্যুদস্ত করে।

তাই গোটা দুনিয়া শিরোপা হাঙ্গেরি হাতেই দেখেছিল৷ ফাইনালে হাঙ্গেরি এক পর্যায়ে ২- ০ গোলে এগিয়ে থেকেও অপ্রত্যাশিতভাবে ৩-২ গোলে হারে,এতে প্রথমবারে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। অস্ট্রিয়া তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান লাভ করে উরুগুয়ে। হাঙ্গেরির ককসিচ ১১ গোল করে হন শীর্ষ গোলদাতা, জার্মানির মোরোলক, অস্ট্রিয়ার প্রোবস্ট আর সুইজারল্যান্ডের হুগি ৬টি করে গোল দেন।

১৯৫৮ বিশ্বকাপ : সুইডেন

চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিলরানার্স আপ : সুইডেন

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সেসময় ১৭ বছরের পেলে ফুটবলশিল্পের রাজাধিরাজ হয়ে দুনিয়া মাতানো শুরু করেছিলেন। পেলের রাজাভিষেক হয়েছিল ১৯৫৮ সালে সুইডেনে ষষ্ঠ বিশ্বকাপের আসরে।

সে আসরে ইউরোপের ১২টি এবং আমেরিকার চারটি দল অংশ নিলেও পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে আর কেউ অংশ নেয়নি। সুইডিশরা কেবল মাঠে বসে নয়, ঘরে বসেও খেলা দেখতে পারত। কারণ সেবারই প্রথম টেলিভিশনে দেখানো হয় বিশ্বকাপ। যদিও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল কেবল সুইডেনে আর বাকি বিশ্ব তা দেখেছিল পরে।

সেবারই প্রথমবারের মতো কোনো দেশ নিজ মহাদেশের বাইরে খেলে শিরোপা জিতেছিল। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের শুরুতে ব্রাজিলীয়রা বিশেষ কোনো দল ছিল না, কিন্তু খেলোয়াড়দের বিদ্রোহ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের ইচ্ছেমতো দল সাজানোর ব্যাপারে কোচকে রাজি করানোর পর দলটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। সে সময় পাঁচজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় মূল একাদশে সুযোগ পান, যাঁদের মধ্যে ছিলেন পেলে নামক এক অজানা কিশোর এবং গারিঞ্চা।

পরেরজন ইতোমধ্যেই ব্রাজিলে জনপ্রিয় এবং বাছাইপর্বে চমক দেখালেও শুরুতে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ, মানসিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, তাঁর চিত্ত অত্যন্ত দুর্বল। শুরুতে একাদশে থাকা শ্বেতাঙ্গদের বদলে আসা এই কৃষ্ণাঙ্গরা নতুন তারকা-উজ্জ্বল দলে দ্যুতি ছড়ান আর তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরেকজন অবিশ্বাস্য কৃষ্ণাঙ্গ দিদি। পায়ে যাদের আগুন জ্বলেঃ লন্ডনের সংবাদপত্র ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস-এ লেখা হয়, ‘আপনাকে চোখ কচলে বিশ্বাস করতে হবে যে ব্যাপারটা সত্যিই এই জগতে ঘটেছে।’

সেমিফাইনালে কোপা ও ফন্টেইনদের ফ্রান্সের বিপক্ষে ব্রাজিল ৫-২ গোলে জেতে এবং ফাইনালেও স্বাগতিক সুইডেনের সঙ্গে একই ব্যবধানে জেতে। সুইডেনের অধিনায়ক লিডহোম, যিনি ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম পরিশীলিত ও মার্জিত খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত, তিনি প্রথম গোলটি করেন। তবে এরপর ভাভা, পেলে ও জাগালো কিংস স্টেডিয়ামের বিমূঢ় দর্শকদের সামনে সুইডিশ দলটিকে গুঁড়িয়ে দেন।

ফ্রান্স তৃতীয় স্থান অর্জন করে আর পশ্চিম জার্মানি চতুর্থ। ফ্রান্সের ফন্টেইন গোলের বন্যা বইয়ে ১৩ গোল দিয়ে শীর্ষ গোলদাতা হন, এর মধ্যে ৮টি ডান পা দিয়ে, ৪টি বাঁ পা দিয়ে আর ১টি মাথা দিয়ে। ৬টি করে গোল দেন পেলে এবং জার্মানির হেলমুট।

১৯৬২ বিশ্বকাপ : চিলি

চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিলরানার্সআপ : চেকোস্লাভিয়া

চিলির সান্তিয়াগোতে ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো ব্রাজিল শিরোপা ধরে রাখে। তৃতীয় স্থান দখল করে স্বাগতিক চিলি, আর চতুর্থ হয় যুগোস্লাভিয়া

১৯৬৬ বিশ্বকাপ : ইংল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ডরানার্সআপ : পশ্চিম জার্মানি

ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা ফাইনালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে ৪-২ গোলে জয় পায়। ওই বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল উত্তর কোরিয়া এবং পর্তুগালের। প্রথম বারের মতো অংশগ্রহণ করে বাজিমাত করে পর্তুগাল। তাঁরা টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান দখল করে, চতুর্থ হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।

১৯৭০ বিশ্বকাপ : মেক্সিকো

চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিল রানার্সআপ : ইতালি

মেক্সিকো সিটিতে ইতালির বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতে ব্রাজিল তৃতীয়বারের মতো সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জেতে। কিংবদন্তী পেলের শেষ বিশ্বকাপ ছিল মেক্সিকো বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় জার্মানি, চতুর্থ হয় উরুগুয়ে৷ জার্মানি গের্ড মুলার ১০ গোল দিয়ে টুর্নামেন্টেের শীর্ষ গোলদাতা হন৷

FIFA World cup Trophy

বিশ্বকাপ ট্রফি। ছবি- সংগৃহীত

১৯৭৪ বিশ্বকাপ : জার্মানি

চ্যাম্পিয়ন : জার্মানিরানার্সআপ : নেদারল্যান্ডস

মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারিয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে। জুলে রিমে ট্রফি বাদ দিয়ে এ আসর থেকেই চালু করা হয় বর্তমান ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি। টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জন করে পোল্যান্ড, চতুর্থ হয় ব্রাজিল৷ ৭ গোল দিয়ে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন পোল্যান্ডের জর্জ লাতো।

১৯৭৮ বিশ্বকাপ : আর্জেন্টিনা

চ্যাম্পিয়ন : আর্জেন্টিনারানার্সআপ : নেদারল্যান্ডস

টানা দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনালে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ডাচদের। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতে আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে। সেই টুর্নামেন্টে মেক্সিকোর বিপক্ষে তিউনিশিয়া ৩-১ গোলে জয়ী হয়। সেটিই বিশ্বকাপে আফ্রিকার কোনো দেশের প্রথম জয়। টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় ব্রাজিল, চতুর্থ হয় ইতালি৷ ৬ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় আর্জেন্টির্নার মারিও ক্যাম্পেস৷

আরও পড়ুন :

» নিলামে মেসির বিশ্বকাপজয়ী জার্সি

» যে শর্তে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলবেন মেসি

১৯৮২ বিশ্বকাপ : স্পেন

চ্যাম্পিয়ন : ইতালিরানার্সআপ : জার্মানি

স্পেন বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতে ইতালি তৃতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এ টুর্নামেন্ট থেকেই প্রথম টাইব্রেকারের প্রচলন করা হয়।

১৯৮৬ বিশ্বকাপ : মেক্সিকো

চ্যম্পিয়ন : আর্জেন্টিনারানার্সআপ : জার্মানি

মেক্সিকো সিটিতে ফাইনালে ৩-২ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। এ টুর্নামন্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনা ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামক বিখ্যাত গোলটি দেয়৷ টুর্নামেন্ট ৬ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয় ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার৷

১৯৯০ বিশ্বকাপ : ইতালি

চ্যাম্পিয়ন : জার্মানিরানার্সআপ : আর্জেন্টিনা

গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট আরো একবার ফাইনালে মুখোমুখি হয়। যদিও এবার ম্যাচের ফলাফল উল্টে যায়৷ রোমে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়। এ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে রজার মিলারের ক্যামেরুন প্রথম আফ্রিকান দল হিসাবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। ৬ গোল দিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ইতালির সালভাতোর স্কিলাচি৷

১৯৯৪ বিশ্বকাপ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিলরানার্সআপ: ইতালি

ফাইালে নির্ধারি সময়ে ০-০ গোলে ড্র থাকায় টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয়৷ টাইব্রেকারে ইতালিকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থ বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে সেলেসাওরা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয় ব্রাজিলের রোমারিও৷

১৯৯৮ বিশ্বকাপ : ফ্রান্স

চ্যাম্পিয়ন: ফ্রান্স রানার্সআপ: ব্রাজিল

প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে ৩২টি দল অংশ নেয়। দিদিয়ের দেশমের নেতৃত্বে স্বাগতিক ফ্রান্স ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছিল। টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় ক্রোয়েশিয়া৷ ৬ গোল দিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ক্রোয়েশিয়ার ডেভর সুকার৷

২০০২ বিশ্বকাপ : দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান

চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিলরানার্সআপ : জার্মানি

প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ দুটি দেশ যৌথভাবে আয়োজন করে। এবং সেবারই প্রথম এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ফিফা বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়। টুর্নামেন্টে ৮ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পান রোনাদো।

২০০৬ বিশ্বকাপ : জার্মানি

চ্যাম্পিয়ন : ইতালিরানার্সআপ : ফ্রান্স

বার্লিনে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হারিয়ে চতুর্থ বারের মতো শিরোপা জেতে ইতালি। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে শেষ হয়। টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হয় ম্যাচের। জিনেদিন জিদান বুকে ঢুঁসো মারেন মাতেরাজ্জিকে, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম নিন্দনীয় ঘটনা। লাল কার্ড পান জিদান। পরে তীব্রভাবে সমালোচিত হন। টুর্নামেন্টে ৫ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা।

২০১০ বিশ্বকাপ : দক্ষিণ আফ্রিকা

চ্যাম্পিয়ন: স্পেনরানার্সআপ: নেদারল্যান্ডস

প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় বসে বিশ্বকাপের আসর। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে নেদারল্যান্ডসকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্পেন প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি জেতে। টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় জার্মানি৷ টুর্নামেন্টে ৫টি করে গোল দেন স্পেনের ডেভিড ভিয়া, উরুগুয়ের ডিয়াগো ফোরলান, নেদারল্যান্ডসের ওয়েসলি স্নাইডার, জার্মানির থমাস মুলার৷

২০১৪ বিশ্বকাপ : ব্রাজিল

চ্যাম্পিয়ন: জার্মানিরানার্সআপ: আর্জেন্টিনা

১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের পর এটি হচ্ছে ব্রাজিলের আয়োজিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। সেই সঙ্গে মেক্সিকো, ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানির পর ব্রাজিল পঞ্চম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজনের খাতায় নাম লেখায়৷ এ বিশ্বকাপে মারাকানায় ইঞ্জুরিতে জর্জরিত ব্রাজিল ৭-১ গোলে জার্মানির কাছে পরাজিত হয়৷ অবশ্য ফাইনালেও উজ্জ্বল ছিল জার্মানি৷ অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে জার্মানরা।

FIFA World cup Trophy

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি। ছবি- সংগৃহীত

২০১৮ বিশ্বকাপ : রাশিয়া

চ্যাম্পিয়ন : ফ্রান্সরানার্সআপ: ক্রোয়েশিয়া

পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার বিশ্বকাপ আয়োজন করে রাশিয়া৷ রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ২১তম আসর। মস্কোর লুঝিনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ৪-২ গোলের ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতে। অধিনায়ক এবং কোচ হিসােব বিশ্বকাপজয়ী দ্বিতীয় ব্যক্তি হন দিদিয়ের দেশম৷ টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় বেলজিয়াম৷ ৬ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন।

২০২২ বিশ্বকাপ : কাতার

চ্যাম্পিয়ন: আর্জেন্টিনা রানার্সআপ: ফ্রান্স

২০ বছর পর আবারো ফুটবলের বিশ্ব আসর ফিরে আসে এশিয়াতে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের ৫টি শহরের ৮টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ২২তম আসর৷ কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনালে অতিরিক্ত সময় শেষে ৩-৩ গোলে সমতা হয়৷ এরপর টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ৩৬ বছর পর তৃতীয় বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপ ফুটবলে কে কতবার কাপ নিয়েছে, এই সমীকরণটি বর্তমান ফুটবলে সমর্থকদের উন্মাদনা বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন। এই তালিকায় শীর্ষে আছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। তারপরেই ইতালি, জার্মানি ও আর্জেন্টিনার অবস্থান।

আরও পড়ুন : 

» ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক সৌদি আরব

» ফুটবল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রাথমিক দল ঘোষণা বাফুফের

ক্রিফোস্পোর্টস/৩১ডিসেম্বর২৩/টিএইচ/এসএ

Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল