Connect with us
প্লেয়ার্স বায়োগ্রাফি

ইতিহাস গড়ার কারিগর মারুফার জীবনের গল্প কাঁদাবে আপনাকে

MARUFA AKTER

এই তো গত রবিবার (১৬ জুলাই) ভারতকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ নারী দল। আর ওই ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার হয়েছে পেসার মারুফা আক্তার। যার গতির কাছে এলোমেলো হয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং লাইন। এই মারুফার উঠে আসার গল্পটা হয়তো আপনাকে কাঁদিয়ে দেবে।

এখন জাতীয় দলে যে মারুফাকে দেখছেন আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ছুটে এসে দুরন্ত গতিতে বল ছুঁড়ছেন, ঠিক চার বছর আগেও বাবার সাথে মাঠে ক্ষেতে কাজ করতেন। ক্রিকেটার হওয়ার কথা শুনে তার বাবা তো রেগে মেগে বলেই বসেন ‘আমি টাকা দিতে পারব না। তুই একা কী করবি, কর!’

আসলেই তো, যে বাড়িতে একবেলা কাজ না করলে পরের বেলা খাওয়া জোটে না, সে পরিবারের ছোট মেয়ের ক্রিকেটার হতে চাওয়া নিতান্তই পাপ! কিন্তু থেমে ছিল না মারুফার স্বপ্নের পথে ছুঁটে চলা। অভাবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পারিবারিক প্রতিবন্ধকতাকে তীব্র গোলার মতো দূরে ছুঁড়ে নিজের দ্যূতি ছড়াচ্ছেন।

গত বছর মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন মারুফা। ১১ ম্যাচে ২৩টি উইকেট শিকার করেছিলেন তৎকালীন দশম শ্রেণিপড়ুয়া মারুফা। এর পুরস্কার স্বরূপ সুযোগ পেয়েছিলেন মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে।

সদ্য কৈশোর পেরোনো মারুফার বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর এলাকায়। কৃষক বাবা আইমুল্লাহ’র চার ভাইবোনের মধ্যে মারুফা সবার ছোট। ছয় সদস্য পরিবারের দিন যেন বদলেছে মারুফার হাত ধরে।

টাকার অভাবে যে মারুফা এক সময় বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছিলেন না, সেই মারুফা এখন ভারতের মতো বিশ্বজয়ী দলকে হারাতে মূল ভূমিকা রাখেন। আর সে সময় মারুফাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করতে সহায়তা করে বিসিবি।

২০০৫ এর পহেলা জানুয়ারিতে জন্ম নেয়া মারুফা ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে বাবার সাথে ধানখেতে চাষ করেছিলেন, সে ছবি সামাজিক মাধ্যমে তুমুল ভাইরাল হয়েছিল।

ধানখেত থেকে উঠে আসা মারুফা অনুসরণ করেন জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলমকে। তবে ছেলেদের বোলিংয়ে মারুফার আদর্শ কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।

বর্গাচাষি বাবা আইমুল্লাহর এক সময় চাওয়া ছিল বাড়ির ছোট মেয়ে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করবে, গরু দেখাশোনা করবে, গরুর খাবার জোগান দিতে বাড়ির পাশের জমিতে ঘাস চাষ করবে। বাবার চাওয়া মেনে স্কুলে ফুটবল খেলার পাশাপাশি বাড়ির কাজগুলোও করতো। গ্রামে নিজের বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছেন ক্রিকেটও। সেই ভাইয়ের একজন আজও আশা দিয়ে আগলে রেখেছেন মারুফাকে। সব সময় সাহস যোগান সেই ভাই।

মা–বাবার আপত্তি উপেক্ষা করে ২০১৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প দিয়ে বিকেএসপির নজরে আসেন। সেই পুরোনো শত্রু অভাবের কারণে ভর্তি হতে না পারলেও খুলনা বিভাগীয় দলে সুযোগ পান। ২০১৯ সালে জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ক্যাম্পে।

করোনার সময় বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্প স্থগিত হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন মারুফা। সেই গল্প বলেছিলেন বিকেএসপির মাঠে দাঁড়িয়ে। ‘আমি যে অনেক পরিশ্রম করতে পারি, এটা কৃষিকাজ করার জন্যই। এখনো বাড়িতে গেলে মই দিই, মাটি সমান করি।’

তবে আবার ক্যাম্প শুরু। বিকেএসপি, প্রিমিয়ার লিগ, ঢাকা লিগ, থেকে জাতীয় দলে। বিশ্বকাপ থেকে সর্বত্রই আজ একাদশের পেস নেতৃত্বে মারুফা। ১৮ বছরেই বাজিমাত করেছেন এই কিশোরী। অভাব, দারিদ্র আর প্রতিকূলতকা বারবার পিছনে ফেলেছেন। দেখিয়েছেন বাঙালি নারীদের আত্মবিশ্বাসী ও উদ্যমী রূপ। এই মারুফারাই যেন সোনার বাংলার প্রতিচ্ছবি। যারা হার মানে না জীবনযুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ইউরোপে আম্পায়ারিংয়ের ডাক পেয়েছে বাংলাদেশের লাকী

Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in প্লেয়ার্স বায়োগ্রাফি