Connect with us
ক্রিকেট

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নিভে যাওয়া সোনালী সূর্য

Zimbabwe Cricket
শেষবার ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ছবি- সংগৃহীত

হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলোঙ্গা, নেইল জনসন, মারে গুডউইন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল–নামগুলোই ছিল একসময়ের জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সোনালী প্রজন্মের প্রতিচ্ছবি। একটা সময় যারা ব্যাটে-বলে প্রতিপক্ষকে চমকে দিত, বড় আসরে অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলতো, তারাই গত এক যুগ ধরে ক্রিকেট অঙ্গনে নিয়ম করে ধুঁকছে৷ তাদের কাছে পরাজয়টা এখন অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছে৷

রবার্ট মুগাবের স্বৈরনীতি, অনিয়ম, দুর্নীতি, বর্ণবাদ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মতো কালো মেঘের নেপথ্যে অস্ত যায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সোনালী সূর্য। নিভে যায় মাঠের ক্রিকেটের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানোর প্রদীপ৷

১৯৮০ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে জিম্বাবুয়ে। স্বাধীনতার সাথে সাথে পূর্বনাম ‘রোডেশিয়া’ বিলুপ্ত হয়ে আফ্রিকার মানচিত্রে উত্থান হয় ‘জিম্বাবুয়ে’ নাম নতুন এ দেশটির৷ স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যেই দেশটির ভাগ্যে জুটে যায় আইসিসির সদস্যপদ৷

ক্রিকেট ইতিহাসে জিম্বাবুয়ে ছিল অনেকটা ধুমকেতুর মতো৷ ১৯৮৩ সালে তারা নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। শুরুটাই হয়েছিল ভরাডুবি দিয়ে৷ প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই হারতে হয় তাদের৷ তবে একটি ম্যাচ দিয়েই ভড়কে দেয় তাবৎ দুনিয়াকে৷ বিশ্বকাপের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় ১৩ রানের ব্যবধানে৷ এ ম্যাচ দিয়েই জিম্বাবুয়ে উঠতি শক্তি হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকে আগাম বার্তা দিয়ে রাখে৷

১৯৯২ সালটি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য এক স্মরণীয় বছর৷ সেই বছরে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তারা হারিয়ে দেয় গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ডকে৷ ১৯৮৩ বিশ্বকাপের পর এবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ‘দ্বিতীয় চমক’ নিয়ে হাজির হয় জিম্বাবুয়ে৷ অস্ট্রেলিয়ার লিভিংটন ওভালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ইয়ান বোথাম ও রিচার্ড ইলিংঅর্থের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি৷ মাত্র ১৩৪ রানে গুটিয়ে যায় তারা। দলের পক্ষে অধিনায়ক ডেভ হটনের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ২৯ রান৷

Zimbabwe Cricket

১৯৯২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারায় জিম্বাবুয়ে।

কিন্তু ১৩৪ রান দিয়েই জিম্বাবুয়ে হারিয়ে দেয় গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, গ্রায়েম হিকের ইংল্যান্ডকে৷ সেদিন জিম্বাবুয়ের এডো ব্রান্ডেস রীতিমতো দুমড়ে-মুছড়ে দেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনকে৷ ১০ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিনি তুলেন ৪ উইকেট। ফলাফল ১২৫ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে জেতে ৯ রানে৷ এ ম্যাচ দিয়েই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ভাগ্য দরজা খুলে যায়৷ সেই বছর ক্রিকেট ইতিহাসে নবম দেশ হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পায় জিম্বাবুয়ে৷

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই ধরা দেয় আরেকটি বড় সাফল্য৷ ১৯৯৮ সালে ঐতিহাসিক পেশোয়ার টেস্টে তারা ওয়াসিম আকরাম, সাঈদ আনোয়ার, আমির সোহেলের তৎকালীন পাকিস্তানকে হারায় ৭ উইকেটের ব্যবধানে৷ একই বছর হারারেতে তারা আরেক এশিয়ান জায়ান্ট ভারতের বিপক্ষেও টেস্ট সিরিজ জয়লাভ করে।

১৯৯৯ সালে ইউরোপে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ছিল জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধ্যায়৷ সেই বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে ভারতকে ৩ উইকেটে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৮ রানে হারিয়ে দেয়৷ বিশ্বকাপে তারা ৫ম স্থান নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে৷ ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ক্রিকেট আকাশে জিম্বাবুয়ে ছিল এক দীপ্তিমান সূর্য। সাফল্যের প্রায় পুরোটাই জুটেছিল এ পাঁচ বছরে৷ সাফল্যের নেপথ্যের ছিলেন ফ্লাওয়ার ব্রাদার্স, হিথ স্ট্রিক, হ্যানরি ওলোঙ্গা, এডো ব্রান্ডেস, নেইল জনসন, মারে গুডউইনদের মতো নায়কোচিত নাম৷

কিন্তু এরপরই পতনের পথচলা শুরু হয়৷ ব্রিটিশ শৃঙ্খল থেকে জিম্বাবুয়কে মুক্ত করা রবার্ট মুগাবে ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সোনালী প্রজন্ম ধ্বংসের মূল হোতা৷ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার স্বৈরনীতি, অনিয়ম, বর্ণবাদের মতো কালো বাতাসে নিভে যায় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সূর্য৷ স্বাধীনতার নায়ক থেকে তিনি রাতারাতি পরিণন হন পুরোদস্তুর স্বৈরশাসকে৷

মুগাবে তাঁর শাসনামলেই ২০০৪ সালে বেশ কিছু বর্ণবিদ্বেষী নীতি ও ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে প্রতিবাদমুখী হয়ে ওঠে তখনকার ক্রিকেটাররা৷ প্রতিবাদী ক্রিকেটারদের জন্য জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের পথ চিরতরে বন্ধ করে দেন মুগাবে সরকার৷ তখন একে একে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলোঙ্গা, নেইল জনসন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের মতো বড় নাম৷ এভাবে উঠতি পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটা একটি দেশের রাতারাতি অকাল মৃত্যু ঘটে৷

আরও পড়ুন: পিএসএল ২০২৪ : একনজরে পূর্ণাঙ্গ সূচি

ক্রিফোস্পোর্টস/১৩জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি

Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ক্রিকেট