
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ম্যাচ মানেই যেন গোলবন্যা। প্রতিপক্ষের জালে একের পর এক বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন ঋতুপর্ণা-মনিকারা। বাংলাদেশের আক্রমণের মুখে প্রতিপক্ষের অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া যেন কিছুই করার থাকে না। তবে চেষ্টা থাকে গোলের ব্যবধান যেন অন্তত কমিয়ে রাখা যায়। তবে তাও সম্ভব হয় কমই। ৭-০ কিংবা ৮-০ গোলের ব্যবধানে প্রায়ই হারতে হয় প্রতিপক্ষকে।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের জালে ৭ গোল করে মোট ১৪ গোল দিয়েছে বাংলাদেশ। পুরো বাছাইপর্বে প্রতিপক্ষকে ১৬ গোল দিয়ে বিপরীতে বাংলাদেশ গোল হজম করেছে মাত্র একটি৷ চলতি সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপেও থেমে নেই মেয়েদের গোল উৎসব। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মেয়েদের ৯-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা৷ মোসাম্মৎ সাগরিকা করেছেন হ্যাটট্রিক, মুনকি আক্তার দুই গোল। এ ছাড়া একটি করে গোল করেছেন স্বপ্না রানী, সিনহা জাহান শিখা, রুপা আক্তার ও শান্তি মার্ডি। শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচের প্রথমার্ধে তিন গোল দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৬ গোল দেয় বাংলাদেশ।
যদিও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অংশ নেওয়া ফুটবলারদের থেকে মাত্র ৯ জনকে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ দলের স্কোয়াডে রেখেছে কোচ পিটার বাটলার। জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা আফঈদা খন্দকারকে এই প্রতিযোগিতায়ও অধিনায়ক করা হয়েছে। তার সঙ্গে দলে আছেন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের স্কোয়াডে থাকা আরও আট ফুটবলার। তারা হলেন– দুই গোলরক্ষক মিলি আক্তার ও স্বর্ণা রানী; ডিফেন্ডার জয়নব বিবি; মিডফিল্ডার মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী; ফরোয়ার্ড মোসাম্মদ সাগরিকা, নবীরণ খাতুন ও উমেলা মারমা। ফর্মে না থাকায় রাখা হয়নি শাহেদা আক্তার ও কোহাতি কিসকুকে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টের মূল পর্বে নিয়ে যাওয়া ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমাদের রাখা হয়নি সাফের স্কোয়াডে। তাদের ছাড়াই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে টুর্নামেন্টে দাপুটে শুরু করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
আরও পড়ুন:
» চেলসিতে স্বপ্ন ছোঁয়া শুরু, ব্লুজদের বিস্ময় ব্রাজিলিয়ান জোয়াও পেদ্রো
» দুর্গম পাহাড় থেকে দেশের গর্ব, ঋতুপর্ণার ফুটবল জার্নি যেমন ছিল
সাফের ফরম্যাটে পরিবর্তন
চলতি টুর্নামেন্টে শুরুতে পাঁচটি দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সে জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান—এই চার দেশ নিয়ে শুরু হয়েছে সাফের এবারের আসর। দলের সংখ্যা কম হওয়ায় টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও বদল এসেছে।
পূর্বে গ্রুপপর্বের মাধ্যমে টুর্নামেন্ট হলেও এবার হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতি৷ যেখানে থাকবে না কোনো ফাইনাল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে দুবার করে খেলবে। একটি দল ছয়টি করে ম্যাচ পাবে। শীর্ষ পয়েন্টধারী দলের হাতে উঠবে ট্রফি। ভারত না থাকায় এবারও বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে৷ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও বাংলাদেশ।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি শিরোপা যাদের
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে একক আধিপত্য বাংলাদেশের মেয়েদের। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের পাঁচ আসরে অংশ নিয়ে চারবারই শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এর মধ্যে শুধু ২০২২ সালের রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে হওয়া ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যান তারা।
আরও পড়ুন:
» টেস্টে ‘স্টপ ক্লক’, ক্রিকেটে আরও যত নিয়ম আনল আইসিসি
» অলিম্পিক-বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশকে কী করতে হবে
২০১৮ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে হয়েছিল নারী সাফ। ভুটানে অনুষ্ঠিত হওয়া সেবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে অভিষেক আসরেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে বাংলাদেশ৷ ওই আসরে ভারত হয় তৃতীয়।
২০২১ সালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরেও শিরোপা থেকে যায় বাংলাদেশের ঘরে৷ এবার ভারতকে ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে বাংলাদেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন আনাই মগিনি৷ তবে ২০২২ সালে সেই ভারতের কাছেই শিরোপা হারায় বাংলাদেশের মেয়েরা।

২০২১ সালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল বাংলাদেশ। ছবি- সংগৃহীত
ভারতের মাটিতে হওয়া ওই আসরে অংশ নেয় বাংলাদেশসহ তিন দল। লিগ পদ্ধতিতে হওয়া টুর্নামেন্টে দুবার করে একে অপরের মুখোমুখি হয়। কিন্তু পয়েন্ট তালিকায় দুই দলের সমান ৯ পয়েন্ট থাকলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সেবার শিরোপা হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। তবে পরের আসরেই ফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
সবশেষ ২০২৪ সালে বিতর্কে ভরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ভাগাভাগি করে বাংলাদেশ ও ভারত। ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারেও দুই দলের খেলোয়াড়রা ১১টি করে গোল করেন।
এরপর রেফারি টসে মাধ্যমে শিরোপা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিক অবস্থায় টসে দুই দল সম্মত হলেও ভাগ্য ভারতের দিকে যাওয়ায় বেঁকে বসে বাংলাদেশ। শুরু হয় প্রতিবাদ।
প্রতিবাদের মুখে ম্যাচ কমিশনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাডেন ডেথ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ম্যাচ কমিশনারের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি ভারত। প্রতিবাদ করতে করতে মাঠ ছাড়েন তারা। এএফসির বাইলজ অনুযায়ী ৩০ মিনিট অপেক্ষা করা হয় ভারতের জন্য। সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারতের ফুটবলাররা মাঠে না নামায় বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শিরোপা দুই দলের ভেতর ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৫জুলাই২৫/টিএইচ/বিটি
