
লম্বা সময়ের খেলা বলে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে অনেকের অভিযোগের অন্ত নেই৷ আবার অনেকে টেস্ট ক্রিকেটেই খুঁজে পান ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য। টেস্ট ক্রিকেটে সময়ের অপচয় রোধ করে গতি ফেরাতে এবার ‘স্টপ ক্লক’ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে আইসিসি৷ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্টেও এখন চালু হচ্ছে এই নিয়ম। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রের শুরু থেকেই যা কার্যকর করা হয়েছে ‘স্টপ ক্লক’।
টেস্ট ক্রিকেটে যেভাবে কাজ করবে স্টপ ক্লক:
ম্যাচে সময়ের অপচয় রোধ করতে গত বছর থেকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ‘স্টপ ক্লক’ পদ্ধতি চালু করে আইসিসি৷ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এটি কাজে দেওয়ায় এবার টেস্ট ক্রিকেটেও একই নিয়ম আনা হয়েছে৷ লম্বা সময়ের মন্থর ওভার রেট সমস্যা কমিয়ে আনতে এই নিয়মের দিকে ঝুঁকেছে আইসিসি।
স্টপ ক্লকের নিয়ম অনুযায়ী, টেস্টে ফিল্ডিং দলকে একটি ওভার শেষের মাত্র এক মিনিটের মধ্যে নতুন ওভার শুরু করতে হবে৷ আর তা করতে ব্যর্থ হলে আম্পায়ার তাদের দুইবার সতর্ক করবেন। সতর্কবার্তার পরও দেরি করলে বোলিং দলকে পাঁচ রান পেনাল্টি দেওয়া হবে। এই পাঁচ রান যোগ হবে ব্যাটিং দলের স্কোরকার্ডে।
ম্যাচে প্রতি ৮০ ওভার পরপর নতুন করে আবার দুইবার ফিল্ডিং দলকে সতর্ক করবেন আম্পায়ার। এসময় ইলেকট্রনিক স্ক্রিনে ৬০ সেকেন্ডের ‘টাইমার’ চালু করবেন তৃতীয় আম্পায়ার।
আরও পড়ুন:
» ২০ বছর ও ৩৩১ ম্যাচ পর অভিনব ঘটনা ঘটল বাংলাদেশের ক্রিকেটে
» কার নেতৃত্বে কত টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, জয়ের শীর্ষে কে?
রিভিউর নিয়মে বদল
রিভিউ নেওয়ার নিয়মের ক্ষেত্রেও বদল আনল আইসিসি৷ ধরা যাক, কোনো ব্যাটসম্যানকে কট বিহাইন্ড আউট দিলেন আম্পায়ার এবং ব্যাটসম্যান রিভিউ নিলেন। আল্ট্রাএজে দেখা গেল, বল তার প্যাডে লেগেছে। ক্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ায় টিভি আম্পায়ার এলবিডব্লিউ হয়েছে কিনা সেটা যাচাই করেন। এতদিন এমন রিভিউয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল, যখন ব্যাটসম্যান ক্যাচের জন্য ‘নট-আউট’ হবেন, তখন এলবিডব্লিউর ক্ষেত্রেও তাকে ‘নট-আউট’ দেওয়া হবে। বল ট্র্যাকিং যদি ‘আম্পায়ার্স কল’ হয়, ব্যাটসম্যান ‘নট-আউট’ থাকবেন।
তবে হালনাগাদ করা নিয়মে, যখন বল ট্র্যাকিংয়ের গ্রাফটি দেখানো হবে, তখন সেখানে ‘অরিজিনাল ডিসিশন’ দেওয়া থাকবে ‘আউট।’ যদি রিভিউয়ের ফলাফল আম্পায়ার্স কল হয়, তাহলে ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া হবে।
নো-বল’ এর ক্ষেত্রে জোরালো হচ্ছে যাচাই-বাছাই:
নো বলে কোনো ব্যাটার ক্যাচ তুলে দিলে আগের নিয়ম অনুযায়ী ওই ক্যাচ আর দেখা হতো না৷ তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী এটি বদলে যাচ্ছে৷ এখন থেকে নো-বলে ক্যাচ হলেও তা দেখা হবে৷ ধরা যাক, অন-ফিল্ড আম্পায়াররা ক্যাচ ঠিকঠাক হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে পারছেন না। যখন তারা টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন টিভি আম্পায়ার তাদের জানিয়ে দিলেন যে ডেলিভারিটি ‘নো-বল’ ছিল। প্লেয়িং কন্ডিশনের আগের নিয়মে, যখন ডেলিভারিটি ‘নো-বল’ হয়ে যায়, ক্যাচটি যাচাই করার প্রয়োজন নেই টিভি আম্পায়ারের।
তবে নতুন নিয়াম অনুযায়ী, ‘নো-বল’ হলেও তৃতীয় আম্পায়ার ক্যাচ যাচাই করবেন। যদি পরিষ্কার ক্যাচ হয়, তাহলে ব্যাটিং দল কেবল ‘নো-বলের’ জন্য এক রান পাবেন। আর যদি ফেয়ার ক্যাচ না হয়, তাহলে ব্যাটসম্যানরা যে রান নেবেন ‘নো-বলের’ এক রানের পাশাপাশি সেগুলোও যোগ হবে। অর্থাৎ নো-বলের এক রানসহ ব্যাটার যদি দুই রান নেয়, তাহলে মোট তিন রান যোগ হবে।
আরও পড়ুন:
» চেলসিতে স্বপ্ন ছোঁয়া শুরু, ব্লুজদের বিস্ময় ব্রাজিলিয়ান জোয়াও পেদ্রো
» দিয়োগো জোটার স্মরণে যেভাবে এক হলো গোটা ফুটবল দুনিয়া
ইচ্ছাকৃত লালা ব্যবহারে বল পরিবর্তন বাধ্যতামূলক নয়
ক্রিকেটে আগে বলে লালা ব্যবহার করা ছিল নিত্যদিনকার দৃশ্য৷ টেস্ট ক্রিকেটে এই দৃশ্যের অবতারণা আরও বেশি ছিল৷ তবে বর্তমানে লালা ব্যবহার করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আইসিসি বলছে, লালা পাওয়া গেলে আম্পায়ারদের বল পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক নয়। দলগুলোর ইচ্ছাকৃতভাবে লালা দিয়ে বল পরিবর্তন করার চেষ্টায় বাধ দিতে এই নিয়ম করা হয়েছে।
ইচ্ছাকৃত ‘শর্ট রান’
এতদিন, ব্যাটাররা দৌড়ে রান নেওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ‘শর্ট রান’ নিলে, অর্থাৎ প্রথম রান সম্পন্ন না করে বাড়তি রানের জন্য দৌড়ালে ব্যাটিং দলকে পাঁচ রান পেনাল্টি দেওয়া হতো। তবে নতুন নিয়মে, এমনটা দেখা গেলে ফিল্ডিং দলকে আম্পায়াররা জিজ্ঞাসা করবেন তারা কোন ব্যাটসম্যানকে স্ট্রাইকে চান। সেই অনুযায়ী ব্যাটসম্যান স্ট্রাইক নেবেন। সঙ্গে ব্যাটিং দলের পাঁচ রানের পেনাল্টি তো থাকছেই।
পাওয়ার প্লে’র নিয়মে নতুন সংযোজন
টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লের নিয়মে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি৷ ২০ ওভারের ক্রিকেটে ৬ ওভার পাওয়ার প্লে থাকলেও এই নিয়ম বলবৎ রয়েছে৷ তবে বৃষ্টি কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে গেলে পাওয়ার প্লে কত ওভার খেলা হবে সেই নিয়মেই পরিবর্তন এনেছে আইসিসি।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইনিংসের দৈর্ঘ্য কমে গেলে পাওয়ার-প্লে আর নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভারে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নিয়মটি কার্যকর হলে, ইনিংসের মোট বলের প্রায় ৩০ শতাংশ বলই ধরা হবে পাওয়ার-প্লে হিসেবে। মূলত খেলার ভারসাম্য রক্ষা করা এবং প্রতিটি ম্যাচেই সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখার চেষ্টা থেকেই এই নিয়ম করা হচ্ছে। নতুন নিয়মের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে আগামী ১০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৪জুলাই২৫/টিএইচ/বিটি
