
কিংবদন্তি পেলে, ম্যারাডোনা থেকে লিওনেল মেসি কিংবা আজকের লামিন ইয়ামাল ও কোল পালমার— ফুটবলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পেরিয়ে গেলেও ১০ নম্বর জার্সির রয়েছে ভীষণ কদর। অনেক তরুণ ফুটবলাররা এখন ক্লাব কিংবা জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সি গায়ে জড়াতে চায়। ফুটবলে ব্র্যান্ডিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ১০ নম্বর জার্সি এখন এক ধরনের মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আবার কারো জন্য এটি হতে পারে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের অনুকরণ করার এক অনন্য উপায়।
অনেক উদীয়মান ফুটবল তারকা নিজেদের ক্লাবের ১০ নম্বর জার্সি বেছে নিচ্ছেন। কোল পালমার এবং জামাল মুসিয়ালা ইতিমধ্যে জার্সি পরিবর্তন করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের ১০ নম্বর জার্সিটি শিগগিরই খালি হয়ে যাবে লুকা মদ্রিচের ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে যোগ দেওয়ার কারণে। সম্ভবত তার ১০ নম্বর জার্সির ফাঁকা স্থান কিলিয়ান এমবাপ্পে পূরণ করতে যাচ্ছেন৷ বার্সেলোনা থেকে আনসু ফাতি চলে যাওয়ার পর ফাঁকা থাকা ১০ নম্বর জার্সি আগামী মৌসুম থেকে গায়ে জড়াবেন লামিন ইয়ামালও।
কিন্তু কেন ফুটবলাররা ১০ নম্বর জার্সি পেতে চায়? এটি কিংবদন্তীদের অনুসরণ নাকি ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড।
ফুটবলের বুট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সোকিটো’ এর মার্কেটিং প্রধান ড্যানিয়েল স্যান্ডিসন জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ খেলোয়াড় চায় তাদের একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকুক, যেমন জুড বেলিংহামের আছে। এক্ষেত্রে তারা এমন একটা নম্বর চায় যা তাদের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে।”

বার্সেলোনায় ১০ নম্বর জার্সি পেয়েছেন লামিন ইয়ামাল। ছবি- বার্সেলোনা
আরও পড়ুন:
» সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি শিরোপা কার?
» চেলসিতে স্বপ্ন ছোঁয়া শুরু, ব্লুজদের বিস্ময় ব্রাজিলিয়ান জোয়াও পেদ্রো
স্যান্ডিসন আরও বলেন, ‘চেলসি ফরোয়ার্ড কোল পালমারের গোল উদযাপনকে অনন্য করে রাখতে তিনি যুক্তরাজ্যের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফিসে ট্রেডমার্ক করার জন্য আবেদন করেছেন। এটিও ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ। ফুটবলারের চারপাশের সবাই ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংকে উৎসাহিত করে, কারণ এটি মোটা অঙ্কের মুনাফা তৈরি করে, মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করে এবং এমন অনেক কমিউনিটিকে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত করে যারা আগে হয়ত এই খেলার বাইরে ছিলেন। এটি বিশাল গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে ১০ নম্বর জার্সি কেবল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নয়, ফুটবলের দিক থেকেও এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়া ম্যাথিউস কুনহা পেয়েছেন ১০ নম্বর জার্সি। এ নিয়ে ক্লাব মিডিয়াকে তিনি বলেন, “ওয়াও, এটা এমন কিছু যার স্বপ্ন সবাই দেখে। এই নম্বরটি মানেই ওয়েইন রুনি… আমি মার্কাস (র্যাশফোর্ড)-এর সঙ্গে জার্সি বদল করেছি৷ কিন্তু আমি জানি, এই নম্বরটি অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় ব্যবহার করেছেন — রুড ভ্যান নিস্টেলরয়, ইব্রাহিমোভিচ। তাই এই নম্বরটি পরা মানেই শুধু একটি জার্সি নয়, বরং এর পেছনের ইতিহাসকে ধারণ করা। এটা দারুণ এক সম্মান।”
১০ নম্বর জার্সির মাহাত্ম্য দক্ষিণ আমেরিকায় শুরু হয় অনেক আগেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসার বহু আগে পেলে এবং ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিদের কারণেই এই জার্সির রয়েছে বিশেষ কদর। ইউরোপীয় ফুটবলেও এই নম্বরের মাহাত্ম্য গড়ে তুলেছেন ফেরেঙ্ক পুসকাস ও জিনেদিন জিদানের মতো তারকারা।
তবে স্পেনে জাভি, ইনিয়েস্তাদের কারণে ৪, ৬ ও ৮ নম্বরের জার্সি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে, তাই এই জার্সিগুলোই সেখানে বেশি দেখা যায়। পর্তুগাল ও জার্মানির মতো দেশগুলোতে ১০ নম্বর জার্সির জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম।
আরও পড়ুন:
» টেস্টে ‘স্টপ ক্লক’, ক্রিকেটে আরও যত নিয়ম আনল আইসিসি
» দিয়োগো জোটার স্মরণে যেভাবে এক হলো গোটা ফুটবল দুনিয়া
ফুটবল মাঠেও ১০ নম্বর জার্সির রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য৷ ক্লাসিক ১০ নম্বরের খেলোয়াড়রা সাধারণত ফরোয়ার্ডের ঠিক পেছনে, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতো, যিনি মূলত দলের প্রধান ক্রিয়েটিভ ফুটবলার৷ তবে আধুনিক ফুটবলে এই ক্লাসিক ১০ নম্বররা কিছুটা বিলীন হয়ে গেছে। তবুও আজকের ফলস ৯, ভেতরে ঢুকে খেলা উইঙ্গার, আর ডিপ-লাইং প্লেমেকারদের উত্থানের কারণে এখন ১০ নম্বর জার্সি পরার মতো উপযুক্ত ফুটবলারদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
উত্তরাধিকারসূত্রেও ১০ নম্বর জার্সির বিশেষত্ব রয়েছে৷ বার্সেলোনায় রোনালদিনহোর কাছ থেকে লিওনেল মেসি পায় ১০ নম্বর জার্সি। মেসির পর আনসু ফাতি পায় জার্সিটি। বিশেষ এই জার্সির সঙ্গে যেমন রয়েছে সম্মান, তেমনি চাপ ও প্রত্যাশাও থাকে বেশি। তবে প্রত্যাশা মেটাতে পারে কমই৷ আনসু ফাতির কথাই ধরা যাক। ২০২১-২২ মৌসুমে মেসির বিদায়ের পর যখন তাকে ১০ নম্বর দেওয়া হয়, তখন তাকেই বার্সার ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে ভাবা হয়েছিল। তবে বার্সা সমর্থকদের একের পর হতাশার গল্প শুনিয়ে পাড়ি জমান ইংলিশ ক্লাব ব্রাইটেন। সেখানেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ধারে চলে যান মোনাকোতে।
আনসু ফাতির পর এবার বার্সেলোনার ১০ নম্বর জার্সি পেয়েছেন লামিন ইয়ামাল৷ যদিও ইয়ামাল একজন উইঙ্গার, তবে ১৭ বছর বয়সেই তিনি বার্সার হয়ে গত মৌসুমে ছিলেন সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টকারী (১৩টি)। এমনকি গত ইউরোতে স্পেনের জার্সিতে ৪টি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। সেক্ষেত্রে উইঙ্গার হয়েও ১০ নম্বর জার্সির যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ইয়ামাল।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭জুলাই২৫/বিটি
