
লিওনেল মেসি– দুই শব্দের এক ছোট্ট নাম হলেও ভক্তদের কাছে এই নামের মাহাত্ম্য অনেক৷ মেসি কত ম্যাচ খেলেছেন, কত গোল করেছেন কিংবা কাকে বিয়ে করেছেন– সবই আপাদমস্তক জানা তার ভক্তদের৷ তবে মেসি সম্পর্কে আপনি ঠিক কতটুকু জানেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক মেসি সম্পর্কে অজানা আরও ১০ তথ্য-
মেসির প্রথম ক্লাব
মেসির প্রথম ক্লাব কি বার্সেলোনা? অনেকের মনেই এমন ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মেসির প্রথম ক্লাব স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। কিন্তু তথ্যটি মোটেও সঠিক নয়৷ বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার আগে মেসি খেলেছেন নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে৷ এটি তার জন্মস্থান রোজারিওর স্থানীয় একটি ক্লাব। তবে নিউওয়েলস বয়েজ ক্ল্যাবের হয়ে মাঠে নামার আগেই ফুটবলে তার অভিষেক হয় স্থানীয় ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে, যে ক্লাবের কোচ ছিলেন স্বয়ং মেসির বাবা হোর্হে ।
যেখানে মেসি আর চে গুয়েভারা এক
লিওনেল মেসির জন্ম আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। একই শহরে জন্ম নিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কিংবদন্তি চে গুয়েভারাও। শুধু একই শহরে নয়, দুজনের জন্মমাসও একই। মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, অন্যদিকপ চে গুয়েভারার জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ জুন। দুজনে দুই জগতের হলেও আর্জেন্টিনার ইতিহাসে দুজনের নামই লেখা থাকবে কিংবদন্তির তালিকায়৷
আরও পড়ুন
» আজ ফাহামিদুলের জন্মদিন, পা রাখলেন ঊনিশে
» বিসিবির সাথে সাইমন টউফেলের চুক্তি, বিপ্লব ঘটবে আম্পায়ারিংয়ে!
» ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ : এক নজরে জানা-অজানা সব তথ্য
গায়কের নামে মেসির নাম
বিখ্যাত মার্কিন গায়ক লায়োনেল রিচির নামেই রাখা হয়েছে রোজারিওতে জন্ম নেওয়া লিওনেল মেসির নাম। মেসির মা সেলিয়া কুচিত্তিনি ছিলেন গায়ক রিচির বড় ভক্ত। তাই রিচির নামের প্রথম অংশের অনুকরণে রাখা হয় মেসির নাম৷ ইংরেজি লায়োনেল (Lionel) শব্দের স্প্যানিশ উচ্চারণ হয়েছে লিওনেল(Lionel)।
মেসির ইতালিয়ান শিকড়
জন্ম আর্জেন্টিনায় হলেও মেসির বাবা ও মায়ের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ইতালির মারকে অঞ্চলের বাসিন্দা। সেই সূত্রে তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মানসূচক ইতালিয়ান নাগরিকত্বও। তবে এ নাগরিকত্ব পূর্ণাঙ্গ নয়, ফলে ইতালিতে ভোটাধিকার বা অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রয়োগ করতে পারেন না তিনি৷
ফুটবলময় পরিবার
মেসির পরিবারের মেসি ছাড়াও রয়েছে একাধিক ফুটবলার। এর মধ্যে অনেকেই জড়িত ছিলেন প্রফেশনাল ফুটবলেও৷ মেসির বাবা হোর্হে ছিলেন গ্রান্ড্যোলির কোচ৷ এই ক্লাবের হয়েই ফুটবলে অভিষেক হয় লিওনেল মেসির৷ প্রফেশনালি ফুটবলের সঙ্গে জড়িত মেসির একাধিক কাজিন৷ তার কাজিন ম্যাক্সি প্যারাগুয়ের ক্ল্যাব অলিম্পিয়ার হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন। আরেক কাজিন ইমানুয়েল গিরোনা এফসি নামক দলের জার্সিতে খেলছেন।
এক ন্যাপকিনেই ইতিহাস
স্পেনের লেইদায় মেসির কিছু আত্মীয়স্বজন থাকতেন। তাদের মাধ্যমেই বালক মেসির অবিশ্বাস্য প্রতিভার খবর পান বার্সার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস। অবশেষে তিনি মেসিকে ট্রায়ালে দেখতে রাজি হন। মেসিকে বার্সা নেবেই—এমন কোনো প্রস্তুতি সম্ভবত ছিল না রেক্সাসের। কারণ, বালক মেসির ফুটবল-ঝলক দেখার পর তাকে সঙ্গে সঙ্গে সই করানোর জন্য কোনো দলিল-দস্তাবেজ তো দূরের কথা, কোনো কাগজই ছিল না। কিন্তু কাগজের জন্য অপেক্ষা করতে আর তর সইছিল না রেক্সাসের। সঙ্গে থাকা ন্যাপকিনেই মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন তিনি। এর পরের গল্পটা তো লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়।
ভোজন রসিক
চুপচাপ স্বভাবের হলেও মেসি ছিলেন ভীষণ ভোজন রসিক৷ বার্সেলোনার মূল দলে খেলা শুরু করার প্রথম দিকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো বাছবিচার করতেন না মেসি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়েটের কারণে তার ফিটনেসের অবস্থা তেমন একটা সুবিধার ছিল না।
তবে বার্সেলোনার ডাগআউটে গার্দিওলা যোগদানের পর মেসিকে কড়া ডায়েটের দিকে নিয়ে যান তিনি৷ মেসির জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্টও ঠিক করে দেন তিনি। এমনকি বার্সেলোনার ট্রেনিং সেন্টার থেকে কোক ভেন্ডিং মেশিন সরিয়ে ফেলার আদেশ দেন গার্দিওলা।
মেসির আইডল কে
পৃথিবীজুড়ে অন্তত কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমিদের একমাত্র আইডল লিওনেল মেসি৷ শুধু ভক্ত নয়, অনেক তারকা ফুটবলাররাও আইডল মানেন মেসিকে৷ সেই মেসির আইডল কে? ছেলেবেলায় মেসির ফুটবল আইডল ছিলেন পাবলো আইমার। আর্জেন্টিনার সাবেক এই মিডফিল্ডার ২০০৪ সালে এক ম্যাচের পর মেসিকে নিজের জার্সি উপহার দেন। সেই জার্সি এখনো নিজের আছে রেখে দিয়েছেন মেসি।
বন্ধুত্ব
ছেলেবেলা থেকেই মেসি ও আগুয়েরোর মধ্যে রয়েছে পরম বন্ধুত্ব। যেই বন্ধুত্ব জারি ছিল জাতীয় দলের জার্সি থেকে ক্লাবের জার্সিতেও৷ পরে সেই বন্ধুত্ব গড়িয়েছে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্কে। আগুয়েরোর ছেলে বেঞ্জামিনের গডফাদার মেসি। কেআরইউ ইস্পোর্টস নামের একটি ইস্পোর্টস প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকও তারা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ৮ হ্যাটট্রিক
মিস্টার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলা হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে৷ তবে একটি জায়গায় অন্য সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির হ্যাটট্রিক আটটি। রাউল, অঁরি, রুনি, সালাহ, ইব্রা, রোনালদো (ব্রাজিলিয়ান), লুকাকু, মুলার, সুয়ারেজ, কাভানি, দিয়েগো কস্তা, হিগুয়েইন, মোরাতা, গ্রিজমান, সানে– এই সব তারকার সম্মিলিত হ্যাটট্রিকের সংখ্যার চেয়েও মেসির হ্যাটট্রিক বেশি৷
ক্রিফোস্পোর্টস/১জুন২৫/টিএইচ/এসএ
