
৩৯ বছর বয়সে ইংলিশ ফুটবলার ওয়েন রুনি ইংল্যান্ডের ক্লাব প্লাইমাউথের ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। পেশাদার ফুটবল ছেড়েছেন আরও ৫ বছর আগেই৷ একই বয়সে ফিলিপে লুইস ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর দায়িত্বে আছেন৷ কিন্তু বয়স ৪৪ হলেও তারই এক স্বদেশী এখনো ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিচ্ছেন। বয়স তাকে ক্যারিয়ারে সায়াহ্নে নিয়ে গেলেও গ্লাভসজোড়া হাতে তিনি যেন গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী।
শুধু তাই নয়, ১৯৯৭ ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের গোলপোস্ট সামলেছেন এই ফুটবলার৷ ঘানাকে হারিয়ে সেবার ছোটদের বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল৷ ব্রাজিলের সেই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী দলে থাকা সেই গোলকিপার এখনো খেলে যাচ্ছেন। তার নাম ফাবিও৷ পুরো নাম ফাবিও দেভিসন লোপেজ মাসিয়েল। চলতি ক্লাব বিশ্বকাপে চোখ রাখলে ফ্লুমিনেন্সের সাফল্যের পেছনে এই নায়ককে চেনারই কথা৷
ক্লাব বিশ্বকাপেই গত ১ জুলাই শেষ ষোলোয় ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারায় ফ্লুমিনেন্সে। সেই ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির ক্লিনশিট রাখার পেছনে দারুণ অবদান রাখেন ফাবিও৷ ম্যাচজুড়ে তারই ৪০ বছর বয়সী সতীর্থ থিয়াগো সিলভার পর তিনিই ছিলেন এক অভেদ্য দেয়াল৷ শেষ পর্যন্ত মিলানের ফুটবলাররা এই দেয়ালের কাছেই আটকে যায়৷ ম্যাচজুড়ে চারটি দারুণ সেভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে বক্সের ভেতরই সেভ করেছেন তিনটি৷ শেষ দিকে পা দিয়ে দারুণ এক ব্লক করে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করেছেন এই গোলকিপার। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৪৪ বছর বয়সী এক গোলকিপারের এমন পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য তো বটেই তরুণ ফুটবলারদের এক শিক্ষাও৷
আরও পড়ুন
» যে কারণে ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান দলগুলো এতো ভালো খেলছে
» মেসি সম্পর্কে অজানা ১০ তথ্য, জানলে অবাক হবেন
» এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ, অভিনন্দন জানালেন ড. ইউনূস
শুধু প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়াই নয়, গ্লাভসজোড়া হাতে ফাবিও’র রয়েছে অবিশ্বাস্য কিছু রেকর্ডও৷ গত ২৬ জুন ক্লাব বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাব মামেলোদি সানডাউন্সের বিপক্ষে ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছেন এই গোলকিপার। এতে ইতালিয়ান কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফনকে পেছনে ফেলে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে (৫০৭) ক্লিনশিট রাখার রেকর্ড গড়েন। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে জয়ের পর তার ক্লিনশিটের সংখ্যাটা এখন ৫০৮।
ক্লিনশিটে-ই অনন্য নয় ফাবিও, ৪৪ বছরের ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি খেলেছেন ১৩৭৮ ম্যাচ। ২০২২ সাল থেকে শুধু ফ্লুমিনেন্সের হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২২২ ম্যাচ৷ চলতি মৌসুমেই এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৩৫ ম্যাচ। তাই ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি এখন ফাবিওর নাগালে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার পিটার শিলটনের। পেশাদার ক্যারিয়ারে ১৩৯০ ম্যাচ খেলেছেন শিলটন। যদিও শিলটনের দাবি, ১৩৮৭টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
ইংল্যান্ড ফুটবল অনলাইনের মতে, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলেছিলেন শিলটন। এরপর ক্লাব ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১২৪৯ ম্যাচ। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন রেকর্ড ১২৫ ম্যাচ। সব মিলিয়ে তার ম্যাচ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮৭, যা তিনিই নিজেই দাবি করেছেন। তার খুবে কাছেই রয়েছে ফাবিও৷ গোটা ক্যারিয়ার ব্রাজিলে কাটানো ফাবিও এখন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে। আগামী সেপ্টেম্বরে তিনি ৪৫ বছরে পা রাখবেন, কিন্তু গত মে মাসে ফ্লুমিনেন্সের সঙ্গে ২০২৬ পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন ফাবিও। ফলে শিলটনের ১৩৮৭ কিংবা ১৩৯০ ম্যাচের রেকর্ডটি ছাড়িয়ে যাওয়া ফাবিও’র এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।
তবে তিনি রেকর্ডটি কত দিন দখলে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে জাগছে প্রশ্ন। কারণ তার পেছনেই ধাওয়া করছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো৷ চল্লিশ বছর বয়সী কিংবদন্তি এখনো ফুটবল মাঠে বল পায়ে যেন এক টগবগে তরুণ৷ পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১২৮৬টি অফিশিয়াল ম্যাচ খেলেছেন। বয়স তাকে কাবু করতে না পারায় খেলতে পারেন আরও ম্যাচ৷ অন্তত ক্যারিয়ারের বড় লক্ষ্য ১০০০ গোলের রেকর্ড পূর্ণ করতেও খেলবেন তিনি৷ রেকর্ডটি গড়তে চাই আরও ৬২ গোল। কিছুদিন আগেই আল নাসরের সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি করেছেন রোনালদো। খেলার ইচ্ছা আছে ২০২৬ বিশ্বকাপেও। তাই রোনালদোর ফাবিওকে ছুঁয়ে ফেলার আশঙ্কা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
তবে তা যাই-হোক, ৪৪ বছর বয়সেও যে ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে দুর্দান্ত প্রতাপে খেলা যায়, তা দেখিয়ে গেলেন ফাবিও৷ একই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন, বয়স বাড়লেও গ্লাভসজোড়ার ধার ফুরিয়ে যায় না৷
ক্রিফোস্পোর্টস/০৩জুলাই২৫/টিএইচ/এসএ
