
চামড়ায় ভাঁজ পড়লেও হাড় যেন এখনো নুয়ে পড়েনি। ফুটবলের সবুজ ঘাসে এখনো বল পায়ে চলে বুড়ো হাড়ের ভেলকি। ৩০ পেরোতেই ফুটবলে খেলোয়াড়দের যেখানে ‘বুড়ো’ বলে ডাকা হয়, সেখানে ৫৮ বছর বয়সেও পেশাদার ফুটবল খেলে চলছেন জাপানের কাজুয়োশি মিউরা। ৫৮ বছরের ক্যারিয়ারে ১০৪৬টি ম্যাচে ২১৮ গোল করেছেন মিউরা। খেলেছেন ব্রাজিল, ইতালি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ১৫টি ক্লাবে।
৪০ বছর বয়সেও ফুটবল মাঠে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাঠের ফুটবলে উড়তে থাকা তরুণদের পাশ কাটিয়ে তিনিই হচ্ছেন শিরোনাম। কাজুয়োশি মিউরা যেন জাপানিদের কাছে এক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। জাপানিরা তাকে ডাকে ‘কিং কাজু’ বলে।
১৯৬৭ সালে জাপানের শিজুকায় জন্মেছিলেন মিউরা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ১৯৮২ সাল থেকেই পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু হয় তার। ১৯৮৬ সালে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের স্মৃতিবিজড়িত ক্লাব সান্তোসে পাড়ি জমান কাজুয়োশি মিউরা। এরপর ১৯৯০ সালে ব্রাজিল ছেড়ে ফিরে আসেন নিজ দেশে। ১৯৯৩ সালে জাপান প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী আসরে গ্যারি লিনেকার ও জিকোর মতো তারকাদের টপকে মৌসুমের সেরা গোলদাতার মুকুট পরেন মিউরা। শুধু তাই নয়, ওই মৌসুমে বর্ষসেরা ফুটবলারের মর্যাদাও লাভ করেন তিনি।
আরও পড়ুন :
» পিএসজিকে কাঁদিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের চমক
» শান্ত-মুশফিকের চেয়েও যেভাবে এগিয়ে পাথুম নিশাঙ্কার সেঞ্চুরি
» মেসি জাদুতে ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল মায়ামি
» হামজা-জামালদের জন্য রঙিনভাবে সেজেছে জাতীয় স্টেডিয়াম
মিউরার এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর। ১৯৯৪ সালে প্রথম ইউরোপিয়ান ক্লাব হিসেবে ইতালির জেনোয়ার হয়ে খেলার ডাক পান তিনি। তবে সেখানে নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারেননি। ২১ ম্যাচ খেলে জেনোয়ার হয়ে করেন মাত্র ১টি গোল। এরপর খেলেছেন ক্রোয়েশিয়ার বিখ্যাত দিনামো জাগরেবে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এফসি ও পর্তুগালের দ্বিতীয় সারির ক্লাব অলিভিয়েরেন্সেতেও খেলেছেন তিনি।
তবে সম্ভবত ক্যারিয়ারে নিজের সেরা সময়টা মিউরা কাটিয়েছেন ভার্দি কাওয়াসাকিতে। দলটির জার্সিতে ১৯২ ম্যাচে তার পা থেকে আসে ১১৭ গোল। ইউকোহামার হয়েও ২৭৮ ম্যাচে তার রয়েছে ২৭ গোল। তরুণ বয়সে, ১৯৯০ সালের দিকেই জাপানের জাতীয় দলেও অভিষেক হয় তার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বল পায়ে ছিলেন দুর্দান্ত- ১৩ ম্যাচ খেলে করেন ১৩ গোল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও রয়েছে ১৪ গোল। সবমিলিয়ে দেশের হয়ে ৮৯ ম্যাচে ৫৫ গোল করেছেন তিনি, যা জাপানের ইতিহাসে এখনও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তবে শুধু গোলের হিসেবে একজন কাজুয়োশি মিউরাকে মাপা যায় না। জাপানিদের ‘কিং কাজু’ এর চেয়েও বড় কিছু। ইচ্ছাশক্তি আর নিবেদনের মিশেলে তৈরি হয় একজন কাজুয়োশি মিউরা। জাপানের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও তিনি এক বড় উদাহরণ।
বর্তমানে জাপানের চতুর্থ স্তরের ক্লাব সুজুকায় খেলছেন তিনি। পেশাদার ক্যারিয়ারে এটি তার ৪০তম মৌসুম। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী পেশাদার ফুটবলারের তকমা অনেক দিন ধরেই তার নামের পাশে। সেটি আরও পোক্ত হয়েছে নতুন মৌসুমে পথচলা শুরুর পর।
গত রোববার (১৫ জুন) জাপানের ক্লাব অ্যাতলেতিকো সুজুকার হয়ে ম্যাচের ৮২তম মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। তার এই স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে ইউকোহামার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে সুজুকা।
অথচ গত কয়েক মাস ধরেই পায়ের চোটে ভুগছিলেন মিউরা। অনেকেই ভেবেছিল, এবার বুঝি বুটজোড়া তুলে রাখবেন। কিন্তু চোট আর বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই আবার মাঠে ফিরলেন তিনি। মাঠে নেমে জাপানিদের প্রিয় ‘কিং কাজু’ জানিয়ে দিলেন-এখনই থামছেন না।
ম্যাচ শেষে এই ফরোয়ার্ড বলেন, “আমি আরও ম্যাচ খেলতে চাই, একই সঙ্গে নিজের মানসিকতাও মেলে ধরতে চাই। সবার সমর্থন ও সহায়তার কারণে ফিট হয়ে উঠে এই ম্যাচটি খেলতে পেরেছি। এখান থেকে আবার নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।”
এমন উদ্যমের কারণেই সবার চেয়ে আলাদা নাম কাজুয়োশি মিউরা। ফুটবল কিংবা জীবনে যারা অল্পতেই লুটিয়ে পড়ছে, হার মানছে— তাদের জন্য যেন বাস্তব শিক্ষার নাম কাজুয়োশি মিউরা। ইচ্ছাশক্তি, নিবেদন আর উদ্যম থাকলে বয়সকে তুড়ি মেরে পৃথিবীও জয় করা যায়— যেমনটা করে চলেছেন জাপানিদের কিং কাজু।
ক্রিফোস্পোর্টস/২০জুন২৫/টিএইচ/এসএ
