
নতুন মৌসুমে নতুন কোচ পেল বসুন্ধরা কিংস। তবে কিংসের ইতিহাসে এমন কোচ আসেনি কখনো, বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগেও এমন দৃষ্টান্ত বিরল। দেশের ফুটবল অঙ্গনে সাড়া ফেলে দেওয়া এই কোচের নাম সার্জিও ফারিয়াস। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে জন্ম নেওয়া ফারিয়াসের কোচিং ক্যারিয়ার দুই দশকের বেশি সময়ের।
বয়স মাত্র ৫৮ হলেও ইতোমধ্যে সাড়ে ৪০০ ম্যাচে বিভিন্ন দলের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন ফারিয়াস। তার লম্বা সময়ের অভিজ্ঞতা স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট করেছে বসুন্ধরা কিংসকে। কিংস অ্যারেনায় ফারিয়াস স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরিউ তিতার। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে চ্যালেঞ্জ কাপ ও ফেডারেশন কাপ জিতলেও বিপিএলে তৃতীয় হয়েছিল রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা। এরপর তিতার সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন করেনি দলটি।
ফারিয়াসের সঙ্গে কিংসের ঢেরায় আসছেন কিউবা মিচেলের মতো বড় নাম। বাংলাদেশের হয়ে এখনো অভিষেক না হলেও সান্ডারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা এই মিডফিল্ডারকে দলে ভিড়িয়েছে কিংস। এছাড়াও ফেরানো হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড ডরিয়েল্টনকে। সবমলিয়ে নতুন মৌসুমের জন্য ভালোই পরিকল্পনা শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস।
কিংসের হয়ে কোচ ফারিয়াসের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হলো এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের প্লে-অফ ম্যাচ। আগামী ১২ আগস্ট কাতারের মাটিতে সিরিয়ান ক্লাব আল কারামাহর মুখোমুখি হবে কিংসরা। প্লে-অফ ম্যাচের জয়ী দল পাবে চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বের টিকিট। এটি এশিয়া মহাদেশের তৃতীয় স্তরের (এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এলিট ও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টুয়ের পর) ক্লাব টুর্নামেন্ট। আগে পরিচিত ছিল এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপ নামে।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগকে সামনে রেখে আগামী রোববার থেকে অনুশীলন শুরু করবে বসুন্ধরা। দেশি-বিদেশি নতুন ফুটবলারদের নিয়ে দলটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন কোচ ফারিয়াস। কারণ, আসন্ন ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য দলবদলের সময়সীমা রয়েছে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত।
কে এই কোচ ফারিয়াস?
১৯৯৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও মাতেউসের কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সার্জিও ফরিয়াস। এরপর একে একে সামলেছেন দাহরা ও সেরানোর ডাগআউটে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৯ টি ক্লাবের দায়িত্ব সামলেছেন এই ৫৮ বছর বয়সী কোচ। সামলেছেন ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দলের দায়িত্ব। অবশ্য শুধু সামলাননি ২০০১ সালে তাদের জিতিয়েছিলেন সাউথ অ্যামেরিকান অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও। ২০০১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে দলটির হয়ে মাত্র চার ম্যাচে ডাগআউটে ছিলেন ফারিয়াস, তাতেই ধরা দেয় এমন সাফল্য।
ফারিয়াসের কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে লম্বা সময় কাটে দক্ষিণ কোরিয়ান ক্লাব পোহাং স্টিলার্সে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ লিগে ক্লাবটির হয়ে ২২০ ম্যাচে ডাগআউটে ছিলেন এ কোচ। তার কোচিংয়ে ২০০৯ সালে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল দক্ষিণ কোরিয়ান ক্লাবটি। একই বছরে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে পোহাং স্টিলার্স।
এরপর যোগ দেন সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-আহলিতে। কিন্তু কোথাও আর স্থির হতে পারেননি। আল আহলি থেকে এক বছরের মাথায় যোগ দেন আরব-আমিরাতের ক্লাব আল ওয়াসলেতে। ক্লাব দুটির হয়ে যথাক্রমে মাত্র ১৬ ও ২১ ম্যাচে ডাগআউটে ছিলেন এ কোচ। এছাড়া মিশর, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও কাতারের ক্লাবের হয়েও কোচিং করিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান কোচ।
সম্প্রতি এশিয়ান ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি আল-হিলালের কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন সার্জিও ফারিয়াস। সবশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে কুয়েতি ক্লাব কাজমার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে কোচিংয়ে এক সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার নিয়েই বসুন্ধরা কিংসে আসতে যাচ্ছেন এই ব্রাজিলিয়ান কোচ।
ক্রিফোস্পোর্টস/১আগস্ট২৫/টিএইচ/বিটি
