
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মাত্র ১০ মাসেই ফারুক আহমেদ অধ্যায়ের সমাপ্তির পর বিসিবির ১৬তম বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বুলবুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুকের পরিচালক পদ প্রত্যাহার করে নিলে বিসিবির সভাপতির পদে থাকার যোগ্যতা হারান তিনি। এরপর আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নতুন কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয় এনএসসি। সংস্থাটির মনোনয়নের পর শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে বিসিবি পরিচালকদের ভোটে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন বুলবুল।
আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে বিসিবি নির্বাচন। গুঞ্জন রয়েছে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিসিবির অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বুলবুল। দীর্ঘমেয়াদে বিসিবিতে থাকতে চান না বলে আগেই জানিয়েছেন তিনি। তাই তার মেয়াদ হতে যাচ্ছে মাত্র ৪ মাস। এরপর বিসিবি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে।

বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি- সংগৃহীত
আরও পড়ুন :
» ১০ মাসেই শেষ ফারুক অধ্যায়, বিসিবির নতুন সভাপতি বুলবুল
» বিসিবির পরিচালক হলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান
কে এই আমিনুল ইসলাম বুলবুল?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যেসব নাম যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছে, আমিনুল ইসলাম বুলবুল তাদের একজন। প্রায় দুই যুগ আগে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান নতুন করে আবার শিরোনামে। এইবার ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ আসনে দায়িত্ব পালন করবেন এই সাবেক।
বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পেলেও ক্রীড়াঙ্গণে আমিনুলের শুরুটা ক্রিকেটার হিসেবে নয়। একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তার। ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছেন তিনি। তবে চোটের কারণে ১৯৮৭ সালে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।

২০০১ সালে আশরাফুলের সঙ্গে অনুশীলনে বুলবুল। ছবি- ক্রিকইনফো
ফুটবল অধ্যায়ে সমাপ্তির পর ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন বুলবুল। তার আন্তর্জাতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে যুব বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম যুব বিশ্বকাপে আইসিসি অ্যাসোসিয়েটস ইয়াং ক্রিকেটার্স দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি। তবে এই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে তেমন সফল না হলেও বল হাতে ছয়টি উইকেট নেন তিনি, যার মধ্যে একটি ছিল ব্রায়ান লারার উইকেট।
একই বছর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে বুলবুলের। এসময় তিনি ঢাকার প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়কত্বও করেন। সেখানে কয়েক বছর খেলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন :
» আতহার আলী খান : ব্যাট ছেড়ে মাইক্রোফোন হাতে এক সৈনিকের গল্প
» মিনহাজুল আবেদিন নান্নু: হিরো নাকি ভিলেন?
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন বুলবুল। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে তারও টেস্ট অভিষেক ঘটে। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটিতে ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ইতিহাস গড়েন তিনি—যা টেস্ট অভিষেক ম্যাচে কোনো দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।

১৯৯৯ সালে কোচ গর্ডন গ্রিনেজের সঙ্গে বুলবুল, খালেদ মাহমুদ, আকরাম খান ও মেহরাব হোসেন। ছবি- সংগৃহীত
পরবর্তীতে বুলবুলের পারফরম্যান্সে ভাটা পড়লেও ভারতের বিপক্ষে ওই একটি ইনিংসেই তিনি জাতীয় বীর হয়ে ওঠেন। এছাড়া তার সেরা ওয়ানডে ইনিংসও ছিল ভারতের বিপক্ষেই। ১৯৯৮ সালে মোহালিতে ভারতের বিপক্ষে ৭০ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
২০০২ সালে দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন বুলবুল। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলে ৫৩০ রান করেন তিনি। যেখানে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। আর ওয়ানডেতে ৩৯ ম্যাচে ৭৯৪ রান করেন, যেখানে ৩টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। এছাড়া বল হাতে নেন ৭ উইকেট।

২০০৯ সালে চায়নার অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারদের শেখাচ্ছেন বুলবুল। ছবি- এএফপি
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বুলবুল অস্ট্রেলিয়ায় কোচিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া আইসিসির হাইপারফরম্যান্স কার্যক্রম এবং ট্রেনিং এডুকেশনেরও প্রধান ছিলেন বিসিবির এই সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি।
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০মে২৫/বিটি
