
আবারও এক হতাশায় শেষ হলো দেশের ফুটবল উন্মাদনা। হংকং ম্যাচ ঘিরে সকল উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা যেন নিমিষেই রূপ নিল বিষাদে। ম্যাচের শেষ সময়ে শমিত সোমের অভিষেক গোলে সমতা, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম। তবে তার এক মিনিট পরেই ডিফেন্ডারদের ভুলে বাংলাদেশের জালে হংকংয়ের গোল। তাতে স্তব্ধ জাতীয় স্টেডিয়াম, স্তব্ধ হামজা-শমিত-ফাহামিদুলরা।
হংকংয়ের বিপক্ষে হেরে গেলেও ম্যাচের শেষ সময় পর্যন্ত চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। তবে লড়াইটা কি প্রতিটা ফুটবলারের ছিল, নাকি গুটিকয়েকের, কেনই বা এভাবে হারলো বাংলাদেশ, কি ভুল ছিল? শমিত সোম-জামাল ভূঁইয়ার মতো পরীক্ষিত ফুটবলার কিংবা জায়ান আহমেদ-ফাহামিদুল ইসলামের মতো তরুণ তুর্কিদের শুরুর একাদশে না রেখেই কি ভুলটা করেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা?

হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুর একাদশ। ছবি- বাফুফে
হংকং ম্যাচের আগে শুরুর একাদশ প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় সমর্থকদের। শুরুর একাদশে হামজা চৌধুরী ও তারিক কাজী ব্যথিত কোনো প্রবাসী ফুটবলারকে রাখেননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। শমিত, জামাল, ফাহামিদুল, জায়ানকে প্রথমার্ধ বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে। আর কাজেম শাহকে তো ম্যাচের আগে মূল স্কোয়াড থেকেই বাদ দিয়েছেন কাবরেরা।
হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার ছিলেন হামজা। মিডফিল্ড কিংবা ডিফেন্স দুই জায়াগাতেই দাপিযয়ে বেড়ান তিনি। তাছাড়া তারিক-শাকিল আহাদরাও ভালো করেছেন। তবে বাকিদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। প্রথমার্ধের শেষদিকে বাকিদের বেশ ক্লান্ত মনে হয়েছে। যার মাসল গুনতে হয়েছে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল হজম করে। হংকংয়ের কর্নার কিক থেকে বল জলটা বাধে বাংলাদেশের পেনাল্টি বক্সে। বল ক্লিয়ার করার সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা তা করতে পারেননি। আর সুযোগ পেয়ে বল জালে পাঠায় সফরকারীরা।

ম্যাচের শুরুতেই ফ্রি-কিক থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন হামজা। ছবি- বাফুফে
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি বদল আনেন কাবরেরা। মাঠে নামে শমিত, জামাল ও ফাহামিদুল। উঠিয়ে নেওয়া হয় দুই সোহেল রানা ও ফয়সাল আহমেদকে। পরবর্তীতে মাঠে নামানো হয় জায়ানকেও। একাধিক পরিবর্তন আনার পর বাংলাদেশ এক গোল হজম করলেও খেলার ধরন পাল্টে যায়। যদিও ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনের ভুলে গোলটি হয়েছিল। গোল হজমের পর আক্রমণে ধার বাড়ায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে জায়ান বাঁ প্রান্তে বেশ গতির সঞ্চার করেন।
ম্যাচের ৮৪তম মিনিটে গিয়ে ফল পায় বাংলাদেশ। মোরসালিনের গোলে এক গোলের ব্যবধান কমায় স্বাগতিকরা। এরপর যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি। মোরসালিনের কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে অভিষেক গোল করে দলকে সমতায় ফেরান শমিত সোম।
শমিতের গোলের পর ড্রয়ের সুবাতাস পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত সমতা ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। এক মিনিটের ব্যবধানে আরেক গোল হজম করে তারা। যে গোলটি বাংলাদেশের সমর্থকদের মাঝে গুলির মতো বিধ্বস্ত হয়েছে। এটিও ছিল রক্ষণের ভুল। বক্সের মধ্যে জটলার পর বল ক্লিয়ার করতে পারেননি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। এরপর সেই মার্কিসের শট গোলরক্ষক মিতুল মার্মার খুব কাছে দিয়ে গেলেও তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন তিনি। আর সেখানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন।
শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে এমন হার বাংলাদেশের ফুটবলারদেরকে পোড়াবে নিশ্চয়ই। তবে এই হার ভুলে, ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি বাংলাদেশ। পরের ম্যাচেও প্রতিপক্ষ এই হংকং। তবে এবার হংকংয়ের মাঠে গিয়ে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। তাই পরের ম্যাচটি বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে হামজাদের জন্য। এখন দেখার বিষয় পরের ম্যাচে সমর্থকদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারেন হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।
ক্রিফোস্পোর্টস/১০অক্টোবর২৫/বিটি
