
গেল মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসম। তবে নতুন মৌসুম শুরুর পরপরই বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে আকস্মিক চুক্তি ছিন্ন করলেন তারিক কাজী। বেতন বকেয়া থাকার অভিযোগ এনে দেশের স্বনামধন্য এই ক্লাবটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি বাতিল করলেন জাতীয় দলের ফিনল্যান্ড প্রবাসি এই ফুটবলার।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক ফেসবুক পোস্টে বসুন্ধরার সঙ্গে ৬ বছরের সম্পর্কের ইতি টানার কথা জানান তারিক। তিনি বলেন, ‘আজ আমি বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়ার কারণে আইনগতভাবে আমার চুক্তি বাতিল করেছি বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে।’
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের অভিযোগ তুলে তারিক বলেন, ‘একজন ফুটবলারের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরবতা বহন করা প্রচণ্ড বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যা আমাকে শুধু একজন পেশাদার হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবেও পরীক্ষা করেছে। এটি শুধু আর্থিক কষ্ট ছিল না; এটি ছিল এক মানসিক চাপ, যা প্রকৃত পেশাদাররা নিঃশব্দে বহন করে। তবুও প্রতিদিন আমি একই ভালোবাসা নিয়ে জেগেছি মাঠে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি, আর অন্তরে লড়েছি এক নীরব যুদ্ধ; ভালোবাসা ও অবিচারের মাঝে।’
ক্লাবের সতীর্থ ও কোচিং স্টাফ এবং সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারিক লিখেন, আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সতীর্থদের, অস্কার ব্রুজন, টিটা ভ্যালেরিউ এবং মারিও গোমেজসহ পুরো টেকনিক্যাল স্টাফকে, যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং সেই সমর্থকদের যাদের কণ্ঠ আমাকে শক্তি দিয়েছে যখন সবকিছু অনিশ্চিত মনে হয়েছে।’
জাতীয় দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারিক লিখেন, ‘আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যখনই আমি লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠে নেমেছি, সেটি আমার কাছে ছিল পবিত্র এক অনুভূতি। সেই মুহূর্তগুলোতে আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি। কারণ বাংলাদেশের হয়ে খেলা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ফুটবল তার আসল রূপে এখনো পবিত্ৰ। বাংলাদেশের ফুটবল একটি নতুন অধ্যায়ের প্রাপ্য এমন এক অধ্যায় যেখানে থাকবে স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায্যতা, প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য, যারা এই খেলাটির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে।’
সবশেষে ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন অধ্যায় শুরুর বার্তা দেন তারিক, ‘এই বিদায় কোনো রাগ থেকে নয় বরং সত্য, মর্যাদা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে। আমি গর্বিত প্রতিটি ঘামের ফোঁটার জন্য, প্রতিটি লড়াইয়ের জন্য, প্রতিটি ট্যাকলের জন্য এবং প্রতিটি মুহূর্তের জন্য যখন আমি বসুন্ধরা কিংসের জার্সি পরে মাঠে নেমেছি গত ছয় বছরে। আমি বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে যাচ্ছি গর্ব নিয়ে, কোনো কষ্ট নিয়ে নয়। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমার হৃদয় ভরপুর থাকবে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলোতে, যা আমি সারাজীবন মনে রাখব! আমার গল্প এখানেই শেষ নয়। এটি কেবল নতুন অধ্যায়ের শুরু।’
২০১৯-২০ মৌসুমে বসুন্ধরায় যোগ দেন তারিক। ক্লাবটির হয়ে পাঁচ মৌসুমে ৬৮টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেন এই ডিফেন্ডার। এই সময়ে ৩টি লিগ শিরোপা, একটি ফেডারেশন কাপ এবং দুইটি স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতেছেন এই তারকা।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭অক্টোবর২৫/বিটি
