Connect with us
ফুটবল

‘বাংলাদেশ দলকে হোটেলে দেখে ফিরে যায় নেপালের বিক্ষুব্ধরা’

Bangladesh national football team
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ছবি- বাফুফে

নেপালে চলমান সরকারের বিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতার মাঝে বেশ কিছুদিন আটকে রয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে নেপালে গিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেশ দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেঁসে গিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে দেশে ফেরেন ফুটবলাররা।

দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিজেদের চোখে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে যেই হোটেলে বন্দি অবস্থায় ছিলেন ফুটবলাররা, সেখানেও ঘটে হামলার ঘটনা। তবে বিক্ষুব্ধ জনতা যখন জানতে পারে এখানে রয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা, তখন সেখান থেকে ফিরে যান তারা।

হোটেলবন্দি থাকা ভয়াবহ সেই দুইদিনের লমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য তপু বর্মণ। এক সাক্ষাৎকারে ‘দেশ রুপান্তর’ সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান ভয়াল সেই দিনগুলোর গল্প। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনাতেও এতটা উৎকণ্ঠা ও ভয়ের মধ্যে ছিলেন না তিনি, যতটা ছিলেন নেপালে।



তপু বর্মণ বলেন, ‘গত বছর জুলাই-আগস্টের বড় একটা সময় মহাখালীর বাসায় বন্দি থাকতে হয়েছিল। ঢাকায় তখন ব্যাপক গণ্ডগোল। অগ্নিঝরা দিনগুলোর ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছিলাম কেবল টিভি দেখে আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তবে কাঠমান্ডু থেকে যে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছি, তা যতটা রোমাঞ্চকর, তারচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার। জীবনে এতটা ভয় কখনো পাইনি। এতটা অসহায়ও কখনো লাগেনি। আবার ভয়-শঙ্কা সেভাবে প্রকাশও করতে পারছিলাম না পাছে পরিবারের মানুষ টের পেয়ে যায়।’


“একদল লোক হোটেলের মূল ফটকে এসে চিৎকার করতে শুরু করে। তারা যখন মূল ফটক ভেঙে ভেতরে আসতে চায়, তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের জানায় এই হোটেলে বাংলাদেশ ও নেপাল জাতীয় দলের ফুটবলাররা আছে। সেটা শুনে বিক্ষুব্ধ মানুষগুলো অবশ্য আর ভেতরে ঢোকেনি।”


‘খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি। অনেক জায়গায় খেলতে গিয়েছি। সবসময় কেবল ফুটবল নিয়েই ভেবেছি। কীভাবে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারব, মাঠে নিজের দায়িত্ব কী হবে এ সবই ছিল আমাদের ভাবনায়, আলোচনায়। নেপালে ৩ সেপ্টেম্বর পা রাখার পর থেকেই ফুটবল নিয়েই ছিলাম। দশরথ রঙ্গশালায় স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে প্রীতি সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ছিল ৬ সেপ্টেম্বর। নেপালের উচ্চতা আর জল-হাওয়ায় এমনিতেই স্বাভাবিক ফুটবল খেলা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। সেটা জয় করে প্রায় ৮-৯ হাজার নেপালি দর্শকের সামনে আমরা প্রথম ম্যাচ খেলি এবং ড্র করি।’

‘এরপর থেকেই দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে শিরোপাটা নিজেদের করার ভাবনা শুরু। তবে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ভাবনা থেকে ফুটবল গায়েব হয়ে যেতে শুরু করে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর আমরা অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে হোটেল লবিতে নেমে আসি। টিম হোটেলের সামনে বাসও প্রস্তুত ছিল। তবে কেন যেন অল নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হচ্ছিল না। প্রায় দুই ঘণ্টা লবিতে কাটানোর পর জানতে পারি বাইরে অনেক গন্ডগোল হচ্ছে, নেপাল পুলিশের পক্ষে নিরাপত্তা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। এর কিছু বাদে অনুশীলন বাতিল হলে নিজ নিজ রুমে চলে আসি। রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়েই জানতে পারি কাঠমান্ডুসহ সারা নেপালে জেন-জিদের তান্ডব চলছে। সন্ধ্যার পরপর খবর আসে একই কারণে পরের দিন ম্যাচটা বাতিল হয়ে গেছে। সেটা শোনার পর থেকেই শুরু হয় নিরাপদে দেশে ফেরার অপেক্ষা।’

‘ম্যাচ যেহেতু হবে না, আমাদের সবার চাওয়া ছিল পরের দিন অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসার। বাফুফেও দ্রুত বিমানের টিকিট পরিবর্তন করে। ৯ তারিখ সকালে আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নাস্তা করে একবারে লবিতে চলে আসি। কয়েক ঘণ্টা লবিতেই অপেক্ষা করার পর জানতে পারি নেপাল বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সব ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। সেটা জানার পর সত্যিকারে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। দেশে ফেরা হবে না জেনে নিজ নিজ রুমে ফিরে আসি। তবে সে সময় বাইরে থেকে ভীষণ হট্টগোলের আওয়াজ কানে আসছিল। আমরা হোটেলের চার, পাঁচ ও ছয় তলায় থাকতাম। উৎসুক হয়ে রুমের জানালার পাশে এসে যা দেখলাম, তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। শত শত তরুণ হোটেলের এক-দুইটা প্লট পরেই একটা বাংলো বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’

‘বিশাল বাড়িতে প্রথমে শুরু হয়ে ভাঙচুর। এরপরই দেখি আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বুঝিনি আগুনের ভয়াবহতা। ধীরে ধীরে আগুন বাড়তে থাকলে হোটেলে আঁচ আসতে শুরু করে। কালো ধোঁয়া আর আগুন দেখে আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ি। একটু পরে হোটেল থেকেও যখন বলা হয় আগুন লেগে গেছে, দ্রুত সবাইকে লবিতে চলে আসতে তখন আমাদের মধ্যে মৃত্যুভয় পেয়ে বসেছিল। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাগ রেখেই আমরা সবাই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি লবিতে। সেখানে আসার পর দেখি একদল লোক হোটেলের মূল ফটকে এসে চিৎকার করতে শুরু করে। তারা যখন মূল ফটক ভেঙে ভেতরে আসতে চায়, তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের জানায় এই হোটেলে বাংলাদেশ ও নেপাল জাতীয় দলের ফুটবলাররা আছে। সেটা শুনে বিক্ষুব্ধ মানুষগুলো অবশ্য আর ভেতরে ঢোকেনি।’

‘সে যাত্রায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে আমরা রক্ষা পাই। এই ঘটনার পর থেকে উৎকণ্ঠা ও দেশে ফেরার তাড়াটা বেশি করে অনুভব করতে থাকি। শেষ পর্যন্ত সরকার, বাফুফে আর বিমান বাহিনীর তৎপরতায় আমরা বিশেষ বিমানে দেশে আসতে পারি। নেপাল থেকে যে বিপর্যস্ত অবস্থা নিয়ে ফিরেছি সেই ধাক্কা সামলে ওঠা সহজ নয়। তবে আমাদের বাস্তবে পা রাখতে হবে, সামনের দিকে তাকাতে হবে। নেপালে ভুলে যাওয়া ফুটবলে দ্রুতই ফিরতে হবে। লড়তে হবে দেশের জন্য। তবে একটা কথাই বলব, ঢাকা হোক কিংবা কাঠমান্ডু; এমন পরিস্থিতি যেন আর ফিরে না আসে সুন্দর এই পৃথিবীর কোনো প্রান্তে।’

উল্লেখ্য, নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশী ফুটবলার ও দলের কোচিং স্টাফদের ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চালায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাস। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে আনা হয় জাতীয় দলের সকল সদস্য এবং ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের। বাফুফে জানিয়েছে প্রয়োজনে ফুটবলারদের মানসিক সহায়তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্রিফোস্পোর্টস/১৩সেপ্টেম্বর২৫/এফএএস

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল