
শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজের পর টি-২০ সিরিজও হার দিয়ে শুরু করেছে টাইগাররা, যা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করেছে। পুরো সফর জুড়েই বাংলাদেশের ব্যাটাররা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, কোনো ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি।
অন্যদিকে, যখন জাতীয় দল ব্যর্থতার সাগরে ভাসছে, তখনই সুখবর এনেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে খেলতে নেমে ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ব্যাট হাতে মাঠে নেমে ৩৭ বলে ৫৮ রানের হার না মানা এক দুর্দান্ত ফিফটি তুলে নিয়েছেন। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিকটসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৪ উইকেট নিয়ে বল হাতেও নিজের জাদু দেখিয়েছেন এই কিংবদন্তি!
প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই সাকিব যেন জানিয়ে দিলেন—পুরনো সাকিব এখনও বিদ্যমান এবং তিনি ফুরিয়ে যাননি।
আরও পড়ুন:
» ব্যাটে-বলে রাজত্ব করে দলকে জেতালেন সাকিব
» লিটনের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টিতে টানা ষষ্ঠ হার বাংলাদেশের
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের এমন পারফরম্যান্স এবং সাকিবের ব্যক্তিগত উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর নেটিজেনরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কড়া সমালোচনা করেছেন।
একই সঙ্গে সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা বলছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে সাকিব, তামিম, মুশফিকদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি।
তাদের মতে, একজন সাকিব গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন সামনের দিকে। আর আজ তাকে ছাড়া এদেশের ক্রিকেট যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে রায়হান চৌধুরী নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সাকিবকে ধ্বংস করতে গিয়ে পুরো বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে গেছে।’
পঞ্চপাণ্ডবদের বয়সের দোহাই দিয়ে রীতিমতো বিতাড়িত করা হয়েছে। গত বছর বেশ জমে উঠে ক্রিকেটপাড়ায় নাটক আর ওটিটি সিরিজ। একবার তামিম-সাকিব তো, আরেকবার মুশফিক-রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই আত্মসমর্পণ করে অবসরের ঘোষণা দেন। অথচ তাদের রিপ্লেসমেন্ট একজনকেও দাঁড় করাতে পারেনি ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।
তামিম-মুশফিক-রিয়াদ অবসরে গেলেও সাকিব এখনো অবসর নেননি; তবে তিনি দেশান্তরী। সাবেক বিসিবিপ্রধান ফারুক আহমেদ যে পথে হেঁটেছিলেন, ঠিক একই পথে হাঁটছেন বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সাকিবের বিষয়টি তিনিও এড়িয়ে গেছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি যদি হুকুমের আসামি হয়ে দেশে থাকতে পারে, তবে সাকিব কেন নয়? এমন প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে পরাজয়ের পর দলের অধিনায়ক মিরাজ যা বললেন, তা অবিশ্বাস্য— তারা তরুণ, শিখছে, তাদের আরও সুযোগ দিতে হবে। এই যে শেখা, আবার বারবার সুযোগ দেওয়া, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখানে মিরাজের কোনো দোষ নেই; দোষ হচ্ছে বিসিবির নির্বাচক আর ম্যানেজমেন্টের। তাদের কারণে আজ এ পরিণতি। অথচ চোখ মেলে তাকালে দেখা যায় পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা বিপিএল খেলে জাতীয় দলে চান্স পায়। আর বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা— কোথাও কেউ নেই। তাই সাকিব ছাড়া আর কেউ নেই বিশ্বমঞ্চে খেলার।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং পাইপলাইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাকিব আল হাসান যখন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে বিশ্বজুড়ে আলো ছড়াচ্ছেন, তখন জাতীয় দলের ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা দেশের ক্রিকেটকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা। সামনে বাংলাদেশের ক্রিকেট কোন পথে এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ক্রিফোস্পোর্টস/১১জুলাই২৫/এসএইচএ
