
আফ্রিকার ছোট দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্দে ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। মাত্র পাঁচ লাখের কিছু বেশি জনসংখ্যার এই দেশটি প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সোমবার প্রাইয়ায় এসওয়াতিনিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে তারা। এর মধ্য দিয়ে আইসল্যান্ডের পর বিশ্বকাপে খেলা দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হলো কেপ ভার্দে।
‘ব্লু শার্কস’ নামে পরিচিত কেপ ভার্দে দলটি ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। এই সাফল্যের পথে তারা পেছনে ফেলেছে আফ্রিকার অন্যতম পরাশক্তি ক্যামেরুনকে, যারা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে আটবার। সোমবারের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে ডেইলন লিভ্রামেন্টো, উইলি সেমেডো ও স্টোপিরা একে একে গোল করে জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচ শেষে প্রাইয়া শহর পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে।
কেপ ভার্দের কোচ পেদ্রো ব্রিতো, যিনি ‘বুবিস্তা’ নামে পরিচিত, ম্যাচ শেষে আবেগভরে বলেন, “এই সাফল্য আমাদের পুরো জাতির জন্য। এটি শুধু ফুটবলের জয় নয়-এটি স্বাধীনতার জন্য যারা লড়েছেন, তাদের জন্যও এক বিশাল সম্মান।”
এদিকে জয়ের পর কেপ ভার্দের রাজধানী প্রাইয়ায় শুরু হয় উদযাপন। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভিড়, আতশবাজির আলো, গাড়ির হর্ন আর স্থানীয় ফুনানা ও রেগে সংগীতে সবাই আনন্দমুখর হয়ে উঠে।
যদিও টুর্নামেন্টের শুরুটা কেপ ভার্দের জন্য সহজ ছিল না। প্রথম ম্যাচে অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে ড্র এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে হারের পর চাপ বাড়ে। কিন্তু এরপর টানা পাঁচ ম্যাচে জিতে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে দলটি।
দলটির খেলোয়াড়দের বড় অংশের জন্ম ইউরোপে, তবে তাদের বাবা-মা বা দাদা-দাদি কেপ ভার্দের নাগরিক ছিলেন। তাই বলা যায়, এই দলটি কেপ ভার্দের প্রবাসীদেরকেও আনন্দিত করেছে।
ম্যাচ শেষে দলের অধিনায়ক রায়ান মেন্ডেস বলেন, “এই মুহূর্তটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের জন্য এটা এক গর্বের দিন।” ৩৯ বছর বয়সী অভিজ্ঞ গোলরক্ষক ভোজনিয়া যোগ করেন, “শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখেছি এই দিনের। আজ তা সত্যি হলো।”
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কেপ ভার্দের এই অর্জনকে ‘অসাধারণ অনুপ্রেরণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “কেপ ভার্দের এই সাফল্য নতুন প্রজন্মকে ফুটবলের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলবে।”
আসন্ন ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আফ্রিকার ছয় প্রতিনিধির একজন হিসেবে কেপ ভার্দে এবার আলজেরিয়া, মিসর, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ঘানার সঙ্গে যুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়া কেপ ভার্দে প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয় ২০০২ সালে। ধারাবাহিক পারফর্ম করে আফ্রিকার ফুটবলে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নেয় তারা। ২০১৩ ও ২০২৩ সালের আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেয়। আর এবার প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়ে দলটি।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৪অক্টোবর২৫/টিএ
