অবশেষে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত। দুটি ফাইনালে ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় ফাইনালে এসে হারমানপ্রীত কৌরের হাত ধরে শিরোপার দেখা পেল দলটি। ২০২৫ আসরের ফাইনালে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শিরোপার দেখা পেয়েছে উইমেন ইন ব্লুরা। তাতে নারী বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল বিশ্ব ক্রিকেট।
রোববার (২ নভেম্বর) বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়েছে ভারত। মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৩.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন নাবি মুম্বাইয়ে বৃষ্টির কারণে দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় ম্যাচটি। তবে ফাইনাল ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা সময় বরাদ্দ থাকায় ওভার কমেনি। আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শেফালি ভর্মা ও স্মৃতি মান্ধানা। উদ্বোধনী জুটিতে ১০৪ রান তুলেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শিকার হয়ে ৫৮ বলে ৭ চারের মারে ৪৫ রান করে ফিরে যান স্মৃতি মান্ধানা।

ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন শেফালি ভর্মা ও স্মৃতি মান্ধানা। ছবি- এএফপি
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জেমিমা রদ্রিগেজকে নিয়ে ৬২ রান যোগ করে বিদায় নেন শেফালি। ১৬৬ রানের মাথায় আয়াবঙ্গা খাকার শিকার হয়ে ৭৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। শেফালির পরেই ৩৭ বলে ২৪ রান করে ফেরেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেমিমা। দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর পর হারমানপ্রীত ও দীপ্তি শর্মা মিলে ৫২ রান যোগ করেন। দলীয় ২২৩ রানের মাথায় ফেরেন হারমানপ্রীত (২০)।
এরপর আমানজত কৌর এসে ১২ রান যোগ করে বিদায় নেন। তবে ষষ্ঠ উইকেটে রিচা ঘোষ ও দীপ্তির ৪৭ রানের জুটিতে তিনশ’র কাছাকাছি পুঁজি গড়তে সক্ষম হয় টিম ইন্ডিয়া। দীপ্তি ৫৮ বলে ৫৮ এবং রিচা ২৪ বলে ৩৪ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৯ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আয়াবঙ্গা খাকা। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন নাদিন দি ক্লার্ক, কোলে লেসলি ট্রিয়ন ও ননকুলুলেকো ম্লাবা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে রানআউটের শিকার হয়ে ফিরে যান তাজমিন ব্রিটস। তার ব্যাটে আসে ৩৫ বলে ২৩ রান। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অ্যানেকে বোস। ৬ বল খেলে কোনো রান না করেই নাল্লাপুরেড্ডি চারানির শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। এর আগে সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাক মেরেছিলেন এই ব্যাটার।
দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর পর লরা উলভার্ট ও সুনে লাসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই জুটিতে শতরান তুলে নেয় দলটি। তবে ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হতে থাকা এই জুটি ভেঙে দেন পার্টটাইমার শেফালি। বোলিংয়ে এসে পরপর দুই ওভারে দুটি উইকেট তুলে নেন তিনি। তার প্রথম শিকার দারুণ খেলতে থাকা সুনে (২৫) এবং দ্বিতীয় শিকার ম্যারিজেন কাপ (৪)।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও চমক দেখান শেফালি ভর্মা। ছবি- আইসিসি
একদিনে প্রোটিয়ারা উইকেট হারাতে থাকলেও অপরপ্রান্ত আগলে দলকে টেনে নিয়ে যান লরা। পঞ্চম উইকেটে তাকে ১৬ রান করে সঙ্গ দেন সিনালো জাফটা। ১৪৮ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যায় আফ্রিকা। তবে ষষ্ঠ উইকেটে অ্যানেরিয়ে ডেকারসেনের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়ে ফের ম্যাচে ফেরে দলটি।
২০৯ রানের মাথায় ডেকারসেনকে (৩৫) ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙে দেন দীপ্তি। ডেকারসেন ফেরার পর সেঞ্চুরি তুলে নেন লরা। তবে সেঞ্চুরির পরেই দীপ্তির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। চলতি আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়া লরা ৯৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কার মারে ১০১ রান করে ফেরেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একাই লড়ে যান লরা উলভার্ট। ছবি- আইসিসি
শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন নাদিন দি ক্লার্ক। তবে তাকে সঙ্গ দিতে আসা আয়াবোঙ্গা রানআউটে শিকার হয়ে ফেরেন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে দীপ্তিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন নাদিন। দৌঁড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেব ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। তাতে ১৮ রানেই থামে নাদিনের ইনিংস এবং চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।

নাদিনের ক্যাচটি ধরে দলের জয় নিশ্চিত করেন হারমানপ্রীত। ছবি- বিসিসিআই
স্বাগতিকদের পক্ষে বল হাতে ৯.৩ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন দীপ্তি। শেফালি ভর্মা ৭ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া একটি উইকেট নেন নাল্লাপুরেড্ডি চারানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত নারী দল : ২৯৮/৭ (৫০ ওভার)
দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দল: ২৪৬/১০ (৪৫.৩ ওভার)
ফলাফল: ভারত নারী দল ৫২ রানে জয়ী
ক্রিফোস্পোর্টস/৩নভেম্বর২৫/বিটি