বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্বে আবারও ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কয়েক সপ্তাহ আগেও তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়কত্ব আর নিতে চান না। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার সিদ্ধান্ত বদলে গেল। আর এই নাটকীয় পরিবর্তনের পেছনে ছিলেন বিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ।
ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ঘটনাটা শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষে। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন তখন শান্তকে নেতৃত্বে ফেরার অনুরোধ জানান। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলে সেই বৈঠক। কিন্তু শান্ত তখনও রাজি হননি।
শান্ত’র যুক্তি ছিল আবার নেতৃত্বে ফিরলে অনেকে সেটা ‘সুযোগসন্ধানী পদক্ষেপ’ মনে করতে পারেন। তিনি বরাবরই খোলামেলা কথা বলেন, সমালোচনাও কম শুনতে হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন।
বিষয়টি আবার সামনে আসে ২৮ অক্টোবর। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ওয়েস্টিন হোটেলে জরুরি বৈঠক ডাকেন। উপস্থিত ছিলেন ফারুক আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, নাজমুল আবেদিন ফাহিম এবং খালেদ মাসুদ পাইলট (জুমে যুক্ত ছিলেন)। আলোচনার মূল বিষয় ছিল আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে টেস্ট অধিনায়ক কে হবেন? বৈঠকে জানা যায়, শান্ত আগেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখনই ফারুক আহমেদ বলেন, “আমাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিন। চেষ্টা করি ওর মন পরিবর্তন করাতে।”
পরদিন থেকেই শুরু হয় ফারুকের উদ্যোগ। বিসিবির কয়েকজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা শান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিন্তু মূল ভূমিকা ছিল ফারুকের। এক কর্মকর্তা ক্রিকবাজকে বলেন, “ফারুক ভাই শান্তকে বোঝান, নেতৃত্ব মানে শুধু দায়িত্ব নয়, সেটি দেশের প্রতি অঙ্গীকারও। তিনি নিজেও একসময় বোর্ড থেকে বাদ পড়েছিলেন, পরে আবার ফিরে এসে কাজ করছেন ক্রিকেটের জন্য। সেটাই শান্তকে অনুপ্রাণিত করেছে।
শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়ার পেছনে কিছু ক্ষোভও কাজ করছিল। শ্রীলঙ্কা সফরের আগে হঠাৎ করেই তাকে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, দায়িত্ব যায় মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। তখন বোর্ডে ছিলেন না ফারুক আহমেদ। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম পরে স্বীকার করেন, “আমরা হয়তো বিষয়টা আরও ভালোভাবে সামলাতে পারতাম। এটা আমারও মনে হয়েছে।”
এখন শান্ত রাজি হয়েছেন আবার টেস্ট দলের নেতৃত্ব নিতে। ফারুক আহমেদ তার ভূমিকায় বরাবরের মতোই শান্ত স্বভাবে থাকলেও বোর্ডের ভেতরে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই এটাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে স্থিতি ফেরানোর এক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
উল্লেখ্য, শান্ত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক। ১৪ টেস্টে তার অধীনে দল জিতেছে ৪টিতে, ড্র করেছে ১টি, হার ৯টি। জয় শতাংশ ২৮.৫৭ যা সাকিব আল হাসান (২১.০৫) ও মুশফিকুর রহিমের (২০.৫৮) চেয়েও বেশি। তবু গত জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের পর হঠাৎই তিনি পদত্যাগ করেন।
ক্রিফোস্পোর্টস/৩নভেম্বর২৫/টিএ