
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে চলছে বুড়োদের দাপট। বয়সের ভারে নুয়ে না পড়ে তরুণ ফুটবলারদের দিচ্ছেন টেক্কা, বল পায়ে মাঠে দেখাচ্ছেন বুড়ো হাড়ের ভেলকি। তারা হলেন- লিওনেল মেসি, আনহেল ডি মারিয়া, সার্জিও রামোস, থিয়াগো সিলভা। একসময় তরুণ বয়সে মাঠের ফুটবলে দাপিয়ে বেড়ানো এই তারকারা ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলা এসেও যেন এখন আরও তরুণ। বয়সটা তাদের কাছে কেবল সংখ্যাই, তাই বল পায়ে ভুলে যান বয়সের মারপ্যাচ।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলকে বিদায় বলেছেন। খেলছেন নিজেদের শেষ সময়ে। কিন্তু বড় মঞ্চের খেলোয়াড় হিসেবে কেউই যে ফুরিয়ে যাননি, তারই যেন প্রমাণ দিচ্ছেন এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে। চলতি ক্লাব বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের জার্সিতে ভীষণ উজ্জ্বল তারা।
২০২৫ সালে ৭ দল থেকে সরে ৩২ দল নিয়ে হচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ। নতুন সংস্করণের এই আসরে সারা বিশ্ব থেকেই ক্লাবগুলোকে জড়ো করেছে ফিফা। সেই সুবাদেই উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা আফ্রিকা থেকেও টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে অনেক ক্লাব। ক্লাবগুলোর হয়ে রীতিমতো মাঠে দাপট দেখাচ্ছেন ‘বুড়ো’ ফুটবলাররা।
আরও পড়ুন
» নারী এশিয়ান কাপ বাছাই : বাংলাদেশের ম্যাচ কবে-কখন?
» কলম্বো টেস্টে দুই মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে লিটন
» এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ
থিয়াগো সিলভার কথাই ধরা যাক। বয়সটা এখন ৪০। কিন্তু রক্ষণের দৃঢ়তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। ব্রাজিল, চেলসি, পিএসজির রক্ষণে যেমন আস্থার প্রতীক হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের জার্সিতেও রক্ষণে ভীষণ কার্যকরী এই সেন্টারব্যাক। গ্রুপপর্বে গত ১৭ জুন বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ফ্লুমিনেন্সের জালে ঢুকতে দেয়নি কোনো বল। পুরো ম্যাচে ৬ ট্যাকল, ৬ ক্লিয়ারেন্স, এরিয়ালে ৮০ শতাংশ সফলতা জানান দেয়, থিয়াগো সিলভা এখনও ফুরিয়ে যাননি।
ফ্লুমিনেন্সের গোলবারের নিচে দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন গোলকিপার ফাবিও। ৪৪ পেরিয়ে যাওয়া এই গোলকিপার ম্যাচজুড়ে ছিলেন এক অভেদ্য দেয়াল। ডর্টমুন্ড ফরোয়ার্ডরা একাধিকবার সিলভাকে পেরিয়ে যেতে পারলেও ফাবিওকে কোনোভাবেই ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়াতে পারেননি। যে বয়সে অবসরে গিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা উপভোগ করার কথা, সেই বয়সে পোস্টের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে তিনটি সেভ করে দলকে গোলশূন্য ড্র এনে দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্স এবং পর্তুগালের বেনফিকার ম্যাচটাকে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ম্যাচ বলা হচ্ছে। ২-২ গোলে ড্র হওয়া সেই ম্যাচে বেনফিকা নিজেদের ফিরে পেয়েছিল দুই আর্জেন্টাইন বুড়ো আনহেল ডি মারিয়া ও নিকোলাস ওটামেন্ডির কল্যাণে।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে বেনফিকার প্রথম গোল আসে আনহেল ডি মারিয়ার পা থেকে। অথচ গত কোপা আমেরিকা দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতি টানেন তিনি। ইতি টানলেও ক্লাবের জার্সিতে এখনো দুর্দান্ত ডি মারিয়া। ক্লাব বিশ্বকাপ শেষে পর্তুগাল ছেড়ে তিনি ফিরে যাবেন নিজের শৈশবের ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে। ওই ম্যাচে বেনফিকার হয়ে ৮৪ মিনিটে সমতা এনেছিলেন জাতীয় দলের সতীর্থ নিকোলাস ওটামেন্ডি। আর্জেন্টিনার হয়ে দীর্ঘদিন রক্ষণ সামলাচ্ছেন এই ডিফেন্ডারও, হয়তো আগামী বিশ্বকাপ দিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানাবেন তিনিও।
ফুটবল যারা অনুসরণ করেন তাদের কাছে অবশ্যই পরিচিত নাম ইন্টার মিলান। সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালও খেলেছে ক্লাবটি। সেই শক্তিশালী দলের বিপক্ষেই ঝলক দেখালেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস। ক্লাব বিশ্বকাপে মেক্সিকান ক্লাব মন্তেরেই এফসির হয়ে গোল করার পাশাপাশি রক্ষণেও রামোস ছিলেন ভীষণ অটল। বল দখলে ৬২ শতাংশ এগিয়ে থাকা ইন্টার মিলানকে হতাশই হতে হয়েছে, গোলের দিকে ১৫টি শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে স্রেফ ২টি।
অন্যদিকে মন্তেরেইর ১১টির মধ্যে লক্ষ্যে থাকে ১টি শটই, তাও সার্জিও রামোসের আবার হেড থেকে। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে কর্নার থেকে রামোসের হেডে এগিয়ে যায় মন্তেরেই। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে তার হেড ভক্তদের মনে করিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে সোনালী দিনের সার্জিও রামোসের কথা। তবে ম্যাচের ৪২তম মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজের গোলে সমতায় ফেরে ইন্টার। বিরতির পর ৭৮তম মিনিটেও দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
ডি-বক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেলেও গোলপোস্টের উপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন তিনি। তবে ম্যাচজুড়ে নজর কাড়েন ৩৯ বছর বয়সী মন্তেরেইর সেন্টারব্যাক সার্জিও রামোস। দুর্দান্ত এক গোল করার পাশাপাশি রক্ষণের দায়িত্বটাও দারুণভাবে সামলেছেন অধিনায়ক রামোস। ১১টি ক্লিয়ারেন্সের সঙ্গে ব্লক করেছেন ২ বার, জিতেছেন ৪টি ডুয়েলও। ৩৪টি পাসের মধ্যে ৩১টিই দিয়েছেন নিখুঁতভাবে।
বুড়োদের মধ্যে ক্লাব বিশ্বকাপে ঝলক দেখা গেল লিওনেল মেসির পা থেকেও। পর্তুগালের ক্লাব পোর্তোর বিপক্ষে ম্যাচে এক জাদুকরী ফ্রি-কিকে ইন্টার মায়ামিকে জয় এনে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
ফিফা আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২৫ গোল তার। ৫৪ মিনিটে তার ওই গোলের সুবাদে ইন্টার মায়ামি প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাবকে হারিয়েছে। ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিওনেল মেসির দল। ইতিহাস গড়ার এমন ম্যাচে মেসি পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও। ক্লাব বিশ্বকাপে শুরুটা তাই বুড়ো আর অভিজ্ঞ ফুটবলারদের দখলে। টুর্নামেন্টের বাকি পথেও বুড়োরাই হতে পারেন দলের ত্রাণকর্তা।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৪জুন২৫/টিএইচ/এসএ
