অস্ট্রেলিয়া–ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পার্থে পেসারদের স্বর্গে ট্রাভিস হেডের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাত্র দুই দিনেই ম্যাচটি জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। আজ (শনিবার) পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
পার্থের উইকেটে দাপট দেখিয়েছে দুই দলের পেসাররাই। প্রথম দিনেই পড়েছিল ১৯টি উইকেট। মিচেল স্টার্কের দাপুটে বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। এরপর বল হাতে দাপট দেখায় সফরকারীরাও। বেন স্টোকস-জোফরা আর্চারদের দাপুটে বোলিংয়ে প্রথম দিন ১২১ রান তুলতেই ৯টি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই বাকি এক উইকেট হারিয়ে ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানের লিড পেয়ে স্বস্তি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা যায় সেই একই চিত্র। স্টার্ক-বোলান্ডদের দাপুটে বোলিংয়ে ১৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। তাতে ২০৪ রানের টার্গেট পায় অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ব্যাটিং ইনিংসে ধস নামান স্কট বোলান্ড। ছবি- গেটি
পার্থে প্রথম তিন ইনিংসে ২০০ পেরোতে পারেনি কেউ। ইংল্যান্ড দুটো ইনিংসেই দেড়শ পেরলেও, অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে দেড়শ’র আগেই অলআউট হয়েছে। তাই ২০৪ রানের টার্গেট ছোট হলেও পিচের কন্ডিশন অনুযায়ী বেশ কঠিনই মনে হচ্ছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের পুরো চিত্রই পাল্টে দেন ট্রাভিস হেড।
টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত মিডল অর্ডারে ব্যাট করে থাকেন হেড। তবে অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত ওপেনার উসমান খাজা আজ কিছুটা অস্বস্তিবোধ করায় ওপেনিংয়ে নামেন হেড। আর ওপেনিংয়ে খেলতে নেমেই ব্যাট হাতে নিজের বিধ্বংসী রূপ দেখান এই তারকা।
শুরুতে কিছুক্ষণ থেকে শুনে ক্রিজে সেট হওয়ার চেষ্টা করেন হেড। এরপরই হাজির হন বিধ্বংসী রূপে। একের পর এক চার-ছক্কায় নাস্তানাবুদ করেন ইংলিশ বোলারদের। আর্চার, মার্ক উড, বেন স্টোকস কিংবা গাস অ্যাটকিনসন- কেউই পাত্তা পাননি হেডের সামনে। ৩ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩৬ বলেই ফিফটি তুলে নেন হেড।

হেডকে থামানোর কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিলো না ইংলিশরা। ছবি- গেটি
ফিফটি তোলার পর আরও মারকুটে হয়ে ওঠেন হেড। ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৯ বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেন এই তারকা। টেস্ট ইতিহাসে রান তাড়ায় এটাই সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি। এর আগে রানতাড়ায় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের গিলবার্ট জেসফের দখলে ছিল। ১২৩ বছর আগে ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন গিলবার্ট।
অ্যাশেজের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক এখন হেডের। সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি অ্যাডাম গিলক্রিস্টের দখলে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে এই পার্থেই ৫৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন গিলক্রিস্ট। আর টেস্ট ইতিহাসে ওপেনারদের মধ্যে যৌথভাবে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি এখন হেডেন। অপর সেঞ্চুরিটি করেন সাবেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের। ২০১২ সালে ওয়াকায় ভারতের বিপক্ষে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি হাকান এই তারকা।

মাত্র ৬৯ বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেন হেড। ছবি- সিএ
রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরির পর আরও ২৩ রান যোগ করেন হেড। তবে জয়েগ আগমুহূর্তে আউট হয়ে যান তিনি। ৮৩ বলে ১৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৩ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। তখনঅস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৩ রান।এরপর স্টিভ স্মিথকে নিয়ে ২৮.২ ওভারে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন মারনাস লাবুশেন। সেইসঙ্গে ৪৯ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন লাবুশেন।
পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে একটা সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি এসেছে। আর ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ইনিংসে ফিফটি করেছিলেন হ্যারি ব্রুক। এছাড়া পুরো টেস্টে আর কোনো ব্যাটার ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরির দেখা পাননি।

দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক। ছবি- গেটি
বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুর্দান্ত করেছেন স্টার্ক। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংস আরও ৩টি উইকেট নেন এই পেসার। ব্রেন্ডান ডগেট দুই ইনিংস মিলিয়ে শিকার করেছেন ৫টি উইকেট। এছাড়া বোলান্ড শিকার করেন ৩টি উইকেট।
ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন স্টোকস। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি কোনো উইকেটের দেখা পাননি। ব্রাইডন কার্স দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জোফরা আর্চার নিয়েছেন ২ উইকেট।
ক্রিফোস্পোর্টস/২২নভেম্বর২৫/বিটি