শেষ ভালো যার সব ভালো তার প্রবাদটি লিভারপুলের জন্য কঠিনই হয়ে যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুটা ছিল দারুণ। টানা সাত ম্যাচ জিতে দাপট দেখিয়েছিল লিভারপুল। সেই দলের বর্তমান অবস্থা দেখে এখন মনে হয়, যেন অন্য এক লিভারপুলকে দেখা যাচ্ছে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ ১২ ম্যাচে ৯ হার যা অ্যানফিল্ড ক্লাবের ইতিহাসে এমন পতন দেখা যায়নি ৭১ বছর ধরে।
সর্বশেষ গত রাতে অ্যানফিল্ডে পিএসভি আইন্দহফেনের কাছে ৪–১ গোলে হার লিভারপুলের দুর্দশাকে আরও স্পষ্ট করেছে। আগের তিন ম্যাচে যেমন তিনটিই তিন গোল হজম করে হেরেছে, সেভাবেই এবারও ভেঙে পড়েছে পুরো ডিফেন্স বিভাগ। যে মাঠটিকে লিভারপুলের দুর্গ বলা হয়, সেখানেই পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি ম্যাচে সাত গোল হজম করেছে দলটি।
ম্যাচ শেষে কার্টিস জোনসের প্রতিক্রিয়া থেকেই দলের দুর্দশা আরও বোঝা যায়। তিনি সরাসরি বললেন, কেন এমন হচ্ছে তার কোনো ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই।
লিগে শেষ দুই ম্যাচ হারের পরও চ্যাম্পিয়নস লিগ ছিল একমাত্র আশার জায়গা। কারণ, এই প্রতিযোগিতায় আগের তিন ম্যাচেই জিতেছিল তারা। ইউরোপের মঞ্চে অ্যানফিল্ডে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডও ছিল তাদের। কিন্তু পিএসভির বিরুদ্ধে শুরুতেই সবকিছু পালটে যায়।
৬ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল দূর করতে গিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করে বসেন ফন ডাইক। অপ্রত্যাশিত সেই ভুলে পেনাল্টির সুযোগ পায় প্রতিপক্ষ। পেরিসিচ সহজেই গোল করে পিএসভিকে এগিয়ে নেন। ১০ মিনিট পর সোবোসলাই সমতা ফেরালেও বিরতির পর লিভারপুল ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধেও তিন গোল হজম করেছে স্লটের দল। ড্রিউয়েচ করেন জোড়া গোল, মাঝখানে টিল করেন আরেকটি। ইংলিশ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পিএসভির শেষ জয় ছিল ২০০৮ সালে। এত বছর পর আবার ইংল্যান্ডের মাঠে এমন জয় পাবে তারা ভাবেনি, কিন্তু লিভারপুলের দুর্বলতার সুযোগ তারা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে।
এই হার লিভারপুলকে ফেলে দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ টেবিলের ১৩তম স্থানে। পিএসভি তেমনি উঠে এসেছে ১৫তম অবস্থানে। সামনে আরও তিন রাউন্ড বাকি, তবে শীর্ষ আটের দৌড়ে লিভারপুল এখন কঠিন সমীকরণের ভেতর।
ম্যাচ শেষে কোচ আরনে স্লটকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত কি না। তিনি জানালেন, এসব বিষয় তিনি ভাবছেন না, মনোযোগ রাখতে চান দলের উন্নতির দিকেই। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন-এমন পারফরম্যান্স তাকে এবং দলের সবাইকেই হতাশ করেছে।
লিভারপুল শেষবার এতটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল ১৯৫৩–৫৪ মৌসুমে। তখনও ১২ ম্যাচে ছিল ৯ হার। ইতিহাস যেন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে স্লট বলছেন, ক্লাব তাঁর পাশে আছে। একটি জয় পেলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই জয় পাওয়াটাই এখন তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৭নভেম্বর২৫/টিএ