
আরও একবার ভাগ্য সঙ্গ দিল না বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের দারুণ সু্যোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত হেরেছিল টাইগ্রেসরা। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দেখা গেল একই চিত্র। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে যেন জিততে জিততে হেরে গেল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে প্রোটিয়াদের কাছে পরাজয় বরণ করল লাল-সবুজের দল।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। বিশাখাপত্তনমের এসিএ-ভিডিসিএ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। জবাবে খেলতে নেমে শেষ ওভারে ৮ রান তাড়া করে জয়ে তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
এদিন দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন নাহিদা আক্তার। গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন বিশ্বকাপের সেঞ্চুরিয়ান ব্যাটার তাজমিন ব্রিটস। এরপর লরা উলভার্ট ও অ্যানেকে বোস মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। দলের ৫৮ রানে এক ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন উলভার্ট। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে ৩১ রান করেন এই ওপেনার।

ইনফর্ম তাজমিন ব্রিটসকে ফিরিয়ে এভাবেই উদযাপন করেন নাহিদা। ছবি- আইসিসি
পরের ২০ রানের মধ্যে আরও তিনটি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। রিতুর বলে বোস (২৮), রাবেয়া খানের বলে অ্যানেরি ডার্কেসেন (২) এবং ফাহিমা খাতুনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সিনালো জাফটা (৪)। তাতে ৭৮ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।
পঞ্চম উইকেট পতনের পর জয়ের জন্য ফেবারিট ছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ম্যারিজেন কেপ ও কোলে ট্রিয়ন। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১০৯ বলে ৮৫ রান যোগ করেন তারা। দলের ১৬৩ রানের মাথায় ম্যারিজেনকে (৫৬) ফিরিয়ে বিপজ্জনক এই জুটি ভাঙেন নাহিদা। এরপর নাদিন দি ক্লার্ক ও ট্রিয়ন মিলে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। এই জুটিতে ২৭ বলে ৩৫ রান তোলার পর রানআউটের শিকার হয়ে ফিরে যান সেট ব্যাটার ট্রিয়ন। ৬৯ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ফেরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

ম্যাচের শুরুতে বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। ছবি- আইসিসি
এরপর মাসাবাতা ক্লাসকে নিয়ে ৩৭ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরতে পারতো ৪৯তম ওভারে। রাবেয়া খানের পঞ্চম বলে লং অফে দলটির সবশেষ পরীক্ষিত ব্যাটার ক্লার্কের সহজ ক্যাচ মিস করেন স্বর্ণা আক্তার। জীবন পেয়ে শেষ ওভারের প্রথম তিন বলেই ১০ রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ক্লার্ক।
বাংলাদেশের পক্ষে ২টি উইকেট শিকার করেন নাহিদা আক্তার। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন রাবেয়া খান, ফাহিমা খাতুন ও রিতু মনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন স্বর্ণা আক্তার। মাত্র ৩৪ বলেই ফিফটি তুলে নেন তিনি। যা বাংলাদেশ নারীদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই ব্যাটার। ফিফটির দেখা পান শারমিন আক্তার সুপ্তাও। ৭৭ বলে ৬ চারের মারে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
ব্যাট হাতে অনেকদিন পর রান পেয়েছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও মিডল অর্ডারে তার ৪২ বলে ৩২ রানের ইনিংস দলের রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেয়। ওপেনার ফারজানা হক ৭৬ বলে ৩০ রান করেন। আরেক ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক ৫২ বলে ২৫ রান করেন। এছাড়া শেষদিকে স্বর্ণাকে সঙ্গ দেওয়া রিতু মণি ৮ বলে ৯ রানের ঝোড়ো ক্যামিও খেলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন ননকুলুলেকো ম্লবা। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন নাদিন ডি ক্লার্ক ও কোলে লেসলি ট্রিয়ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২৩২/৬ (৫০ ওভার)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৩৫/৭ (৪৯.৩ ওভার)
ফলাফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী
ক্রিফোস্পোর্টস/১৩অক্টোবর২৫/বিটি
