Connect with us
ক্রিকেট

চলে গেলেন বোলারদের আতঙ্ক খ্যাত ‘ডিকি’ বার্ড

Umpire Dickie Bird
আম্পায়ার ডিকি বার্ড। ছবি- সংগৃহীত

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা আম্পায়ার হ্যারল্ড ডিকি বার্ড আর নেই। মঙ্গলবার ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় এই আম্পায়ার। চোখ বার্তায় ক্লাবটি জানিয়েছে, ‘ডিকি শুধু একজন আম্পায়ার নন বরং তিনি ছিলেন ক্রিকেটের এক অনন্য চরিত্র। তার সততা, রসবোধ আর খেলাধুলার প্রতি অনন্য নিবেদন তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।’

ক্রিকেট দুনিয়ার এই অনন্য ব্যক্তি কে নিয়ে তার প্রয়াত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাংবাদিক মাইকেল পারকিনসন বলেছিলেন, ‘শেক্সপিয়ার ছাড়া এমন প্রাণশক্তি ধারণ করা এক চরিত্র কল্পনা করা যেত না। ক্রিকেটের সৌন্দর্য হলো তার বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করেছে এবং তার রসিকতাকে উদযাপন করছে।’

বার্ড স্কুলজীবন থেকেই ‘ডিকি’ নামে পরিচিত, যা সারাজীবন তার সঙ্গী হয়ে ছিলো। ইয়র্কশায়ারের বার্নসলেতে বেড়ে ওঠা ডিকি সারাজীবন গর্বের সাথে নিজেকে শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ও প্রকৃত ইয়র্কশায়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার জন্মস্থান চার্চ লেনে তার একটি ভাস্কর্য রয়েছে। তার ভাস্কর্যটি উঁচু প্লিন্থে বসাতে হয়েছিল; কারণ নিচুতে থাকলে ভক্তরা তার বাড়ানো আঙুলে নানা কিছু ঝুলিয়ে রাখতো।



প্রথম জীবনে বার্ড একজন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের একজন ওপেনার ছিলেন। ৯৩ ম্যাচে তার ২ টি সেঞ্চুরিও রয়েছে। ১৯৫৯ সালে গ্ল্যামর্গানের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮১ রান তার ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস। তবে দীর্ঘস্থায়ী হাঁটুর চোটে আর ক্রিকেট খেলা হয়নি বার্ডের। ইয়র্কশায়ার ও লেস্টারশায়ারের হয়ে তিন হাজারের বেশি রান করা বার্ড কখনো সুযোগ পাননি জাতীয় দলে।

পরবর্তীতে ক্রিকেটার থেকে আম্পায়ারিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন বার্ড। ৩৬ বছর বয়সে শুরু করেন আম্পায়ারিং। ১৯৭০ সালে প্রথম কাউন্টি ম্যাচে ও ১৯৭৩ সালে হেডিংলিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে আম্পায়ার হিসেবে তার অভিষেক হয়।

১৯৭৫ সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে আম্পায়ার ছিলেন বার্ড। ম্যাচে একটি মজার ঘটনা ঘটে বার্ডের সাথে; ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় শেষে ভক্তরা মাঠে ঢুকে পড়লে তার প্রশস্ত টুপি ছিনতাই হয়ে যায়। পরবর্তীতে এক বছর পর লন্ডনের এক বাস চালকের মাথায় তার সেই টুপি তিনি দেখতে পান।

বার্ডকে বোলারদের ‘দুঃস্বপ্ন’ বলা হতো। এলবিডব্লিউ এর সিদ্ধান্ত অনেক সতর্ক ও নিখুঁতভাবে দেওয়ায় তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। তার রসিকতা, সরল আচরণ এবং সৎ সিদ্ধান্ত তাকে ক্রিকেটে বিরল সম্মানে দেয়।

কিংবদন্তি স্যার ইয়ান বোথাম তাকে নিয়ে রসিকতার ছলে বলেছিলেন, ‘বাকিং ম্যাড অর্থাৎ একেবারেই অদ্ভুত মজার চরিত্র।’

নিজের আম্পায়ারিং নিয়ে বার্ড বলেছিলেন, ‘আমি ক্যামেরার দিকে তাকাই না, আমি নিজে যা দেখি তার উপর সৎ ও ন্যায়সঙ্গত ভাবে সিদ্ধান্ত দেই। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সম্মান পাওয়া টা সত্যিই আনন্দের। ‘

১৯৯৬ সালে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে তিনি শেষ আম্পায়ারিং করে। টেস্ট শেষে দুই দলের দেওয়া ‘গার্ড অফ অনার’ এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি করে।

ধর্মপ্রাণ বার্ড কখনো বিয়ে করেননি। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটারদের বাড়ি থাকে না, তাই ভেবে নিয়েছি বিয়ে করবো না। দুইবার বিয়ের খুব কাছাকাছিও গিয়েছিলাম কিন্তু করা হয়নি। একটা ছেলে থাকলে ভালো লাগতো, তাকে নিয়ে খেলা দেখলে আনন্দ পেতাম। তবে সব স্বপ্ন সত্যি হয় না। আমি ক্রিকেটকে জীবন দিয়ে দিয়েছি আর ক্রিকেট আমাকে দিয়েছে এক পরিপূর্ণ জীবন।’

ক্রিফোস্পোর্টস/২৩সেপ্টেম্বর২৫/এফএএস

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ক্রিকেট