
চলছে ক্লাব বিশ্বকাপের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গ্রুপপর্বের দুর্দান্ত লড়াই শেষে এবার শেষ ষোলোতে কোন দলের প্রতিপক্ষ কারা- সবই এখন চূড়ান্ত। টুর্নামেন্টে লাতিন আমেরিকা থেকে অংশ নেওয়া চার ব্রাজিলিয়ান ক্লাবই দাপট দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছে শেষ ষোলোতে। তবে জায়গা করে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্স। লিওনেল মেসির পায়ের জাদুতে উতরে গেল ইন্টার মায়ামিও।
ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে থেকে অবশ্য ছিটকে গেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট আতলেতিকো মাদ্রিদ। এশিয়া থেকে কেবল জায়গা করে নিয়েছে আল-হিলাল। পিএসজি, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, ইন্টার মায়ামি আর চার ব্রাজিলিয়ান ক্লাব- সব মিলিয়ে শেষ ষোলোতে আরও এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার জানা যাক ক্লাব বিশ্বকাপের জানা-অজানা সব তথ্য।
কখন শুরু হয় ক্লাব বিশ্বকাপ, কার শিরোপা কয়টি
ক্লাব বিশ্বকাপের শুরুটা হয় ২০০০ সালে। কখনো ৬ দল কিংবা ৭ দল নিয়ে মাঠে গড়াত এই টুর্নামেন্ট। এভাবে টানা ২১টি আসর গড়ালেও তা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে এবারই নতুন মোড়কে ক্লাব বিশ্বকাপকে সাজিয়েছে ফিফা। পৃথিবীর ছয় মহাদেশ থেকে মোট ৩২টি দল নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে ফিফা, যেমনটা জাতীয় দলের বিশ্বকাপে এত দিন হয়ে এসেছে। ক্লাব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদের ঝুলিতে রয়েছে ৬টি শিরোপা।
আরও পড়ুন
» বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাই, খেলা দেখা যাবে যেখানে
» ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে প্রাইজমানি কত? কার কী অর্জন
» ৬ ফুট উচ্চতার জায়ান হাকিম আসছেন? বাফুফের রাডারে আরও যারা
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪টি শিরোপা রয়েছে আরেক স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার। তবে ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসরেই শিরোপা গেছে ব্রাজিলে। উদ্বোধনী আসরে ব্রাজিলের ক্লাব করিন্থিয়াস জিতে প্রথম শিরোপা। এরপর ২০০৫ ও ২০০৬ সালে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে সাও পাওলো ও ইন্টারনাসিওনাল।
ফিফা বিশ্বকাপের আদলেই ক্লাব বিশ্বকাপ
জাতীয় দলগুলোকে নিয়ে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপের আদলেই হচ্ছে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপ। ছয় মহাদেশের ৩২টি দলকে মোট ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল যাবে শেষ ষোলোতে, সেখান থেকে জয়ী আট দল মুখোমুখি হবে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল উতরে যাওয়া চার দলকে নিয়ে গড়াবে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল এবং সবশেষ গড়াবে সেরা দুই দলের ফাইনাল। সব মিলিয়ে এক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে মোট ৬৩টি ম্যাচ।
যেভাবে চূড়ান্ত হয়েছে ৩২ দল
ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য দল চূড়ান্ত হয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে। মূলত টুর্নামেন্টে সর্বশেষ চার মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদেরই জায়গা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সর্বোচ্চ ১২টি ক্লাব এসেছে ইউরোপ থেকে, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রয়েছে ৬টি। এশিয়া থেকে ৪টি এবং আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ ছিল একটি জায়গা। ২০২৪ এমএলএস সাপোর্টারস শিল্ড জিতে সেটি পেয়েছে ইন্টার মায়ামি। প্লে–অফের মাধ্যমে লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি যুক্ত হয়েছে। আবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল ওশেনিয়া ফুটবল ফেডারেশন থেকেও নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটিকে জায়গা দেওয়া হয়েছে টুর্নামেন্টে।
ফিফা বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি প্রাইজমানি
বিশ্বের ছয় মহাদেশের ৩২ ক্লাবকে নিয়ে সাজানো এই টুর্নামেন্টের জন্য মোটা অঙ্কের প্রাইজমানি ঘোষণা দিয়েছে ফিফা। এমনকি অর্থের পরিমাণটা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকেও ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য প্রাইজমানি ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২,১৫৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ছিল মাত্র ৪৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ কাতার বিশ্বকাপের দ্বিগুণেরও বেশি প্রাইজমানি ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য বরাদ্দ করেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
৩২ দলের মধ্যে গ্রুপপর্বে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রতিটি জয়ের জন্য পাবে ২০ লাখ ডলার- বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ম্যাচ ড্র হলে দুই দল সমানভাবে ভাগ করে নেবে ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। শেষ ষোলো পর্বে জয় পাওয়া আট দলের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ৭৫ লাখ ডলার- বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ী চার ক্লাব পাবে ১ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ডলার করে, বাংলাদেশি টাকায় এটি ৫৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সেমিফাইনালে জয়ী দুই দলের পকেটে ঢুকবে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। রানার্সআপ হওয়া দলের জন্য থাকছে ৩ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১৪ জুলাই ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফাইনালে শিরোপা উঁচিয়ে ধরা ক্লাবের জন্য থাকছে ৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৮৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনার চেয়েও বেশি।
নতুন নিয়মে নতুন প্রযুক্তি
ক্লাব বিশ্বকাপে রেফারিদের শরীরে রাখা হয়েছে বডি ক্যাম, যা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ফুটবলের এক নতুন দৃষ্টান্ত। বডি ক্যামেরার মাধ্যমে রেফারির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভিডিও দেখা যাবে (শুধুমাত্র সম্প্রচারযোগ্য অনাবশ্যক দৃশ্য)। এমনকি ভিএআর দৃশ্যও স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে, রেফারির সিদ্ধান্ত পাবলিক অ্যাড্রেসেও ঘোষণা করা হবে। এছাড়াও সেমি-অটোমেটিক অফসাইড প্রযুক্তি রাখা হয়েছে এবার। এআই-নির্ভর অডিও বার্তাসহ অফসাইড সিগনাল থাকবে।
নতুন নিয়ম হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপে বল ধরার পর গোলরক্ষককে ৮ সেকেন্ডের মধ্যে বল ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো কর্নার হবে। এর আগে রেফারি এক হাতের আঙুল দিয়ে পাঁচ সেকেন্ডের সতর্কবার্তা দেখাবেন।
ক্লাব বিশ্বকাপে যে দেশের ফুটবলার সবচেয়ে বেশি
বরাবরের মতোই ফুটবলে রাজত্ব ব্রাজিলের। ক্লাব বিশ্বকাপেও বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি- ১৪২ জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার খেলছেন। ব্রাজিলের পরেই আছে আর্জেন্টিনা, যাদের ১০০ জন ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে খেলছেন। এছাড়াও স্পেন, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মেক্সিকো, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, মরক্কো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবলাররাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৮জুন২৫/টিএইচ/এসএ
